খেলাধুলা

জয়ের স্বপ্নে বিভোর শাহবাগের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা

‘রান কম তো কী হয়েছে? সাকিব, মোস্তাফিজ, রুবেলরা আজ ভালো বোলিং করতে পারলে ইনশাল্লাহ্ বাংলাদেশই চ্যাম্পিয়ন হবে!’ রাত সোয়া ৯টায় শাহবাগ মোড়ে স্থাপিত জায়ান্ট স্ত্রিনের পর্দায় বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৬৬ রানের স্কোর বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থী এভাবে তাদের মনের কথা একে অপরকে বলছিলেন।

Advertisement

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আহসানুল করিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বুকে সাহস থাকলেও দলটি ভারত বলে কিছুটা টেনশন রয়েছে। তবে শুরুতেই ভারতের দুএকটা উইকেট ফেলতে পারলে নিশ্চয় বাংলাদেশ জয় ছিনিয়ে আনবে।

শাহবাগের মোড়ে জায়ান্ট স্ত্রিনে শ্রীলঙ্কার মাঠে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারতের ফাইনাল খেলা দেখতে বিকেল থেকেই সেখানে ভিড় জমে যায়। সন্ধ্যার পর মানুষের ভিড়ে জাতীয় যাদুঘরের সামনে হয়ে কাঁটাবনের রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়।

বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, রিকশাচালক, দিনমজুর, চা-পান ও সিগারেট বিক্রেতারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা থেকে জায়ান্ট স্ত্রিনে খেলা দেখতে শাহবাগে ছুটে আসেন। কেউ কেউ প্রধান সড়কে ও রাস্তার ডিভাইডারে জায়গা না পেয়ে জাদুঘর ও বিএসএমএমইউ’র মাঝের ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেন।

Advertisement

চার বা ছয় মারলে উপস্থিত সকলকে সমস্বরে গলা ছেড়ে ক্রিকেটারদের নাম ধরে চিৎকার করতে দেখা যায়। আবার কেউ রান আউট হলে কিছুক্ষণের জন্য পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। আজকের ম্যাচে দর্শকরা সাব্বিরের চার-ছয় দেখে বিমোহিত হয়ে তার নাম জপতে থাকে।

ভারতের ইনিংসের শুরুতে মিরাজের ওভারে রোহিত শর্মার বিশাল ছক্কা দেখে মন খারাপ করলেও সাকিবের বলে (২.৪ ওভারে) শেখর দেওয়ান কট আউট হলে আনন্দে ফেটে পড়েন শাহবাগের ক্রিকেট পাগল দর্শকরা।

যখনই অধিনায়ক মাশরাফি কিংবা পেসার আল আমিন ভারতের ব্যাটসম্যানদের বোল্ড কিংবা ক্যাচ আউট করেছেন তখনই সকলে কড়তালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। ক্যাচ মিস হলেও একইভাবে কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছে উফ। অফিস ফেরত অনেককেই বাস থেকে নেমে খেলা দেখতে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

রিকশাচালক মাঈনুদ্দিন। লালবাগের বাসিন্দা এই রিকশাচালকের আয়-রোজগার বৃষ্টির জন্য আজ ভালো হয়নি। মতিঝিল থেকে বারডেম হাসপাতালে দু`জন যাত্রী নিয়ে আসেন। হঠাৎ করে চোখ পড়ে বিশাল সাইজের স্ত্রিনে বাংলাদেশ-ভারতের খেলা চলছে। তাই আর দেরি না করে রিকশাটি নিয়ে কাছে এসে সিটের ওপর বসে খেলা দেখছেন।

Advertisement

জাদুঘরের সামনে একজন যাত্রী কলাবাগান যাবে কি-না মাঈনুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সে উত্তরে জানায়, প্রথম সেশনে বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ের ২০ ওভার শেষ না হলে তিনি সেখান থেকে নড়বেন না।

শাহবাগ জাদুঘরের সামনে স্থাপিত ফুটওভার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল সাজু, নইম, রিপনসহ আরও কয়েকজন পথশিশু। মাশরাফি বোলিংয়ের জন্য রান আপ শুরু করা মাত্রই ওরা সবাই চেঁচিয়ে ওঠে উইকেট উড়াইয়া দেন আল আমিন ভাই।

আবার ব্যাটিং শুরু হলে একইভাবে বিভিন্ন ক্রিকেটারের নাম ধরে চার-ছয় মেরে ভারতকে হারিয়ে দেয়ার চিৎকার করছিলেন।

এমইউ/বিএ/আরআইপি