আগামী বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। এছাড়া কর ব্যবস্থার সংস্কার করে ব্যক্তিগত আয়ের করসীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা, ব্যক্তিগত আয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণির জন্য করের পরিমাণ কমানো, সকল নাগরিকের জন্য ট্যাক্স কার্ডের প্রচলন করা, ভ্যাট ও করের আওতা বাড়ানোসহ বেশকিছু সুপারিশও করেছেন তারা।
Advertisement
আগামী অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনায় অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তারা শিক্ষা খাতের দুরবস্থা, শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, চিকিৎসক সঙ্কট ইত্যাদি বিষয় নিয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আলোচনায় সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, করের হার গত নয় বছরে বাড়লেও মাথাপিঁছু আয়ের তুলনায় করের আদায় কম। আদায় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবার জন্য বিনামূল্যে ট্যাক্স ফাইল করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাক্তিগত ট্যাক্স উপরের দিকে অনেক বেশি। ফলে অনেকেই ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এটা কিছুটা কমানো হলে অনেকেই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেন না। ভ্যাট আদায় বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
Advertisement
তিনি ব্যাংক ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তাই আমাদেরর সতর্ক হতে হবে। আমাদের ব্যাংকগুলোর একজন এমডি, সিইও’র বেতন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর বেতন দুই লাখ টাকা।
‘ব্যাংকের নির্বাহীদের এ বেতন অস্বাভাবিক বেশি। এতে লাগাম টানা দরকার’- বলে মত দেন হাছান মাহমুদ। তিনি উপজেলা পর্যায়ে সেরা ট্যাক্সদাতা পুরস্কার চালুরও পরামর্শ দেন।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম ট্যাক্সের রেট কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে কর জালের আওতা বাড়বে এবং সবাই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবেন। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফের আবেদন জানান তিনি। এছাড়া পরিবেশবান্ধব গ্রীন ফ্যাক্টরির উপকারিতার কথা তুলে ধরে তিনিবলেন, তাদের ট্যাক্স ছাড় দেয়া প্রয়োজন যাতে অন্যরা পরিবেশ উপযোগী গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পারে।
এ সময় তিনি বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধের জন্য সব জায়গায় সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করারও পরামর্শ দেন।
Advertisement
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মীর শওকত আলী বাদশা উপকূলীয় মাছ চাষ উন্নয়নে আরও বেশি বরাদ্দের দাবি জানান। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষের অনুমতি দিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষ করলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সুন্দরবনে চোরাই হরিণ শিকারের সংখ্যাও কমে আসবে।
সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা গ্রামে থাকেন না। উচ্চশিক্ষার অজুহাত এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পরিচয়ে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। ঢাকায় চলে আসেন। এটা চরম বাস্তবতা। দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা হাসপাতালগুলোর মধ্যে আমার উপজেলা কাপাসিয়ার অবস্থান আট নম্বরে। এতো ভালো অবস্থানের পরও আমার উপজেলায় চিকিৎসক ধরে রাখতে পারি না। চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য সরকারকে গভীরভাবে বিষয়টি দেখতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, যারাই ট্যাক্স দেবে তাদেরই ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। সে এক টাকা ট্যাক্স দিলেও। তিনি বলেন, কেউ যদি এক টাকাও ট্যাক্স দেন, তার জন্যও ট্যাক্স কার্ড করা হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হক, মকবুল আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, জাহিদ আহসান রাসেল, রেবেকা মোমেন প্রমুখ।
এমএ/এমএআর/জেআইএম