আন্তর্জাতিক

কন্যাদান ছাড়াই বিয়ে পড়ালেন প্রথম নারী পুরোহিত

পিতৃতান্ত্রিক সমাজের চিরায়ত ‘কন্যাদান প্রথা’ পালন ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গের প্রথম হিন্দু নারী পুরোহিত হিসেবে এক তরুণীর বিয়ে পড়িয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসে নন্দিনী ভৌমিক নামের এক নারী। নন্দিনীর বিয়ে পড়ানোর এ ঘটনা রীতিমতো পশ্চিমবঙ্গের ‘টক অব দ্য’ টাউনে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

নন্দিনী ভৌমিক বলেন, ‘আমি পিতৃতান্তিক মানসিকতা দূর করতে চাই; যেখানে কন্যাদের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব অস্বীকার করে। এই প্রথায় কন্যাকে পণ্যের মতো মনে করা হয়; তাকে দান হিসেবে তুলে দেয়া হয়।’

দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতার অন্বিতা জনার্ধনান ও অর্ক ভট্টাচার্যের বিয়ে পড়ান নন্দিনী ভৌমিক। তার এই কাজ নারীর ক্ষমতায়নের অনন্য উদাহরণ।

নন্দিনী ভৌমিকের পেশা

Advertisement

জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের শিক্ষক পশ্চিমবঙ্গের প্রথম এই নারী পুরোহিত। গত ৪০ বছরে প্রায় ৪০টি বিয়ে পড়িয়েছেন তিনি; সবগুলোতেই কন্যাদান প্রথাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন তিনি।

ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ছাড়াও ১০ নাট্য গ্রুপের সঙ্গে জড়িত নন্দিনী ভৌমিক। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে বিয়ে পড়ানোর জন্য অধিকাংশ সময়ই ধর্মীয় উৎসবকে বেছে নেন তিনি। কলকাতা ও এর আশপাশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের, বর্ণের ও জাতিগত গোষ্ঠীর জুটিদের বিয়ে পড়ান তিনি।

ভৌমিক এ কাজের উৎসাহ পেয়েছেন তার শিক্ষাগুরু গৌরি ধর্মপালের কাছে। এমনকি বিয়ে পড়িয়ে তিনি যে অর্থ পান; তার অধিকাংশই দান করে দেন উড়িষ্যার পুড়ির কাছের বালিঘাই এতিমখানায়।

২৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে পড়ানোর সময় নন্দিনীর সঙ্গে ছিলেন তার দলের সদস্য, সহকর্মী, বন্ধু ও ধর্মীয় অন্য পুরোহিতরা। বিয়ের অনুষ্ঠানে নন্দিনী যখন সংস্কৃত মন্ত্র পড়েন তখন তা ইংরেজি এবং বাংলায় অনুবাদও করা হয়। ব্যাকগ্রাউন্ড বেজে উঠে রবীন্দ্র সংগীত।

Advertisement

অর্ক বলেন, ‘আমি শুনেছি অনেক পুরুষ পুরোহিত ভুল মন্ত্র পাঠ করেন। কিন্তু গত বছর আমার এক বন্ধুর বিয়েতে নন্দিনী ভৌমিককে বিয়ে পড়াতে দেখেছি। তিনি সংস্কৃত মন্ত্র হুবহু বাংলা এবং ইংরেজিতে অনুবাদ করে পাঠ করছিলেন।’

হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ বিশেষ করে ‘ঋগবেদে’ কন্যাদান ছাড়াই নারী পুরোহিতদের বিয়ে পড়ানোর ব্যাপারে উল্লেখ অাছে।

নন্দিনী নিজেকে সামাজিক পরিবর্তনের একজন কর্মী মনে করেন; যিনি সমাজে চিন্তার প্রসার ঘটাতে চান।

যা বলছেন পণ্ডিতরা

সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত ও ভারতীয় তাত্ত্বিক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুরি বলেন, ‘হিন্দু ধর্মে নারীদের পুরোহিত হওয়ার পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। এমনকি, বহু নারী পুরোহিতের উদাহরণ আছে; যারা বেদগুলোতে আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক বিতর্কে অংশ নিয়েছেন।’

নারী পুরোহিতের বিয়ে পড়ানো আজকের তরুণদের কাছে ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নন্দিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে।

নন্দিনী ভৌমিক এ বিয়ে পড়ানোর আগে নিজের মেয়েরও বিয়ে পড়িয়েছেন কন্যাদান ছাড়াই। তার দলসহ শিগগিরই আরো একটি বিয়ে পড়াবেন তিনি।

সূত্র : দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ান।

এসআইএস/আরআইপি