কোথায় হাথুরুসিংহে? কি হলো ক্রিকেট ম্যাজিশিয়ানের? ভেলকি আর জারি-জুরি বুঝি শেষ? তার ভক্ত আর অনুরাগীরা এখন কি বলবেন? সাকিব ফিল্ডিংয়ে ব্যাথা পেয়ে মাঠ ছাড়া ফাইনাল জেতার পর হাথুরুর চোখ, মুখ আর শরীরি অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিলো, তিনি বলতে চাইছিলেন, ‘কি বাঙ্গালিরা দেখলে তো আমি কি চিজ! আমি কি পারি এবার বুঝলা?
Advertisement
অতি হাথুরু ভক্তদের কেউ কেউ তাতে উচ্ছসিত হয়ে বলতে শুরু করেছিলেন, ইস কি কোচটাই না হাতছাড়া হয়েছে। ইস! আজ যদি হাথুরু থাকতো, তাহলে নির্ঘাত ঘরের মাঠে তিন জাতি টুর্নামেন্ট জিততাম আমরা। তারপরও দুই ম্যাচের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ হাতছাড়া হবার পর হাথুরুসিংহেকে নিয়ে আরও এক ধরনের মিথ তৈরি হয়ে যায়। হাথুরুকে কেউ কেউ প্রয়াত বব উলমার আর লেম্যানের কাতারেও স্থান দিয়ে বসেন।
বলতে থাকেন, হাথুরুর বুদ্ধি, মেধা, টিপস আর কৌশলের কাছেই নাকি পারলো না টাইগাররা। তাদের জন্য প্রশ্ন, কই হাথুরু এবার আর ভেলকি দেখাতে পারলেন না?
এবার আর তার জারি-জুরি কাজে দিল না? আসলে ক্রিকেট কোচের ভুমিকা অতি সামান্য। এটা ফুটবল নয় যে, কোচ ছক কষে আর কৌশল নির্ধারন করা থেকে শুরু করে ফর্মেশন, স্ট্র্যাটেজি সব নিজে করে দেন। ক্রিকেট মাঠে অধিনায়কই সর্বেসর্বা। তার হাতেই সব। আর ক্রিকেটাররাই শেষ কথা। কোচের হাতে কোন জাদুর কাঠি কিংবা আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপ থাকে না- যার স্পর্শে দল পুরো পাল্টে যায়।
Advertisement
ক্রিকেট মাঠে যে ক্রিকেটাররাই শেষ কথা, তা আজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অভিজ্ঞতা যে অনেক বড়, তাও দেখালেন বাংলাদেশের এ পরিণত ও অভিজ্ঞ যোদ্ধা।
১৬০ রান করতে গিয়ে তামিম আর মুশফিক সাজানো পথেই হাঁটছিলেন; কিন্তু হঠাৎ একটু উচ্চাভিলাসি শট খেলতে গিয়ে মুশফিক কাভারে লঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরার হাতে ধরা পড়ার পর তামিমও হতোদ্যম হয়ে আউট হয়ে যান উইকেটে ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে।
এরপর ছোট্ট মড়ক। এ ম্যাচের অধিনায়ক সাকিব এবং পরে সৌম্যও আউট। ব্যাটসম্যান বলতে শুধু রিয়াদ। সঙ্গে মিরাজ ও মোস্তাফিজ; কিন্তু তারাও শূন্য রানে আউট। এমন অবস্থায় শেষ ওভারে নিজের টার্ন ঠিক রেখে চার বলে ১২ রান করা এবং লঙ্কান বোলার ও ফিল্ডারদের হতবাক করে দেয়ার সু-কঠিন কাজটিই করে দেখালেন রিয়াদ।
প্রমাণ দিলেন অভিজ্ঞতা অনেক বড় শক্তি। সম্পদ। অনেক কার্যকর দাওয়াই। এই শ্রীলঙ্কার মাটিতে শততম টেস্টে কোচ হাথুরুসিংহের কারসাজি ও নীল নকশায় শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছিলেন রিয়াদ। কি আশ্চর্য্য! সেই কলম্বোর আরেক মাঠে এবার হাথুরুসিংহেকে কড়া জবাব দিলেন সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই।
Advertisement
গায়ের জোরে কিংবা মুখে নয়। ব্যাট হাতে জানিয়ে দিলেন, ‘কি দেখলেন তো এবার! আমাকে তো খুব দল থেকে বাদ দিয়েছিলেন। দেখিয়ে দিলাম, আমি পারি। আমার মেধা-যোগ্যতা আছে। দল জেতানোর ক্ষমতাও আছে।’
আজ রাতে লঙ্কান ফাস্ট বোলার উদানার শেষ ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ আর পঞ্চম বলে যথাক্রমে বাউন্ডারি, ডাবলস আর ছক্কা হাঁকিয়ে রিয়াদ প্রমাণ দিলেন , যে কোন পরিস্থিতিতে দল জেতানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তার।
হয়ত দু’বছর আগে- ভাগ্য অনুকুলে ছিল না। তাই ভারতের পেসার বুমরাহ’র ফুলটস বলও ছক্কা হয়নি। আর আজ উদানার ফুললেন্থ ডেলিভিারি নাগালের ভিতরে পেয়েই স্কোয়ার লেগ আর মিড উইকেটের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়া। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে বল সোজা বাতাসে ভেসে গিয়ে পড়লো গ্যালারিতে।
সে ছয়, রিয়াদের, প্রতিশোধের ছয়। সে ছক্কা নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে বাংলাদেশের ফাইনাল নিশ্চিতের শট। আইসিসি বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে জোড়া সেঞ্চুরি আর এই গত জুনে ইংল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাচ জেতানো শতরানের পর এবার টি-টোয়েন্টি আসরেও গর্জে উঠলো রিয়াদের ব্যাট।
প্রমাণ হলো, শুধু ওয়ানডেতেই নয়। টি টোয়েন্টি ফরম্যাটেও তিনি পারেন। তার ব্যাট কথা বলে। হাসে। দল জেতায়। জয়তু রিয়াদ। অভিনন্দন টাইগারদের।
আইএইচএস/জেএইচ