খেলাধুলা

শেষ মুহূর্তে এসেই খেই হারাল বোলাররা

নিদাহাস ট্রফির গড় পড়তা যে স্কোরলাইন, তাতে ১৫৯ তেমন বড় স্কোর নয় মোটেও; কিন্তু পরিবেশ-প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করলে আর লঙ্কান ইনিংসের শুরুর দিককার পরিস্থিতিকে বিবেচনায় আনলে এটা অনেক বেশি।

Advertisement

বেশি এই কারণে যে, মাত্র ৪১ রানে (৮.১ ওভারে) ইনিংসের অর্ধেকটা খুইয়ে বসেছিল থিসারা পেরেরার দল। ফিরে গেলেন দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা (৪), কুশল মেন্ডিস (১১), উপুল থারাঙ্গা (৫), দাসুন সানাকা (০) আর জীবন মেন্ডিস (৩)।

একদম খাদের কিনারায় পড়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দেড়শো পার করে ১৬০‘র দোরগোড়ায় গিয়ে থামল লঙ্কানরা। দুই বাঁ-হাতি পেরেরা (কুশল পেরেরা আর থিসারা পেরেরা) সেখান থেকে দলকে টেনে পৌছে দিলেন ১৫৯-এ।

যাতে কুশল পেরেরার সংগ্রহ ৪০ বলে ৬১। আর অধিনায়ক থিসারার ব্যাট থেকে আসলো ৩৭ বলে ৫৮ রানের অধিনায়েকোচিত ইনিংস। চাপের মুখে ভড়কে না গিয়ে বুক চিতিয়ে লড়লেন দুই লঙ্কান বাঁ-হাতি উইলোবাজ। ষষ্ঠ উইকেটে এ দু’জন মাত্র ১০.১ ওভারে ৯৭ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে তুললেন।

Advertisement

দুই বাঁ-হাতিকে থামাতে ঘেমে নেয়ে উঠেছেন অধিনায়ক সাকিব। তার নিজের দুই ওভার আর অপর বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল অপুর পুরো চার ওভার বাকিই থাকলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলেও বাস্তবতা হলো- দুই বাঁ-হাতি কুশল পেরেরা আর থিসারা পেরেরার উত্তাল ব্যাটিংয়ের মুখে আর বোলিংয়ে আসেননি বাঁহাতি সাকিব। অপর বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপুও অব্যহৃতই থেকে গেলেন।

সাকিবের দুই আর অপুর ৪- এই ৬ ওভার বোলিং কোটা পূর্ণ করেন অফস্পিনার মাহমুদউল্লাহ (৪ ওভারে ০/২৯) ও সৌম্য সরকার (২ ওভারে ১/২১)। এদিকে শুরুতে টস জয় থেকে শুরু করে মাঠে ফিরেই দূর্বার ও সফল অধিনায়ক সাকিব। অধিনায়কের অন্তর্ভুক্তিতেই পাল্টে গিয়েছিল শরীরি ভাষা আর বোলিং।

প্রায় দুই মাস (২৭ জানুয়ারি ঘরের মাঠে তিনজাতি আসরের ফাইনাল থেকে) মাঠের বাইরে থেকে ২৪ ঘন্টা আগে কলম্বো উড়ে এসে আজ সন্ধ্যায় মাঠে নেমেই বল হাতে তুলে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের দ্বিতীয় ও লঙ্কান ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ব্রেক থ্রু আনলেন। ফিরিয়ে দিলেন গুনাথিলাকাকে। তাতেই উজ্জীবিত পুরো দল। লঙ্কানরা ব্যাকফুটে।

সাকিবের দেখানো পথে হেঁটে লঙ্কান টপ অর্ডারে আঘাত হানলেন মোস্তাফিজও। দুই ওভারের স্পেলে ৪ রানে ফিরিয়ে দিলেন দুই লঙ্কান কুশল মেন্ডিস ও সানাকাকে। এরপর মেহেদি হাসান মিরাজের বলে আউট বাঁ-হাতি জীবন মেন্ডিস; কিন্তু এরপর আর কোন ঔষধই কাজে দেয়নি। কুশল পেরেরা আর থিসারা পেরেরার কঠিন প্রতিরোধের মুখে সবাই খেই হারিয়ে ফেললেন।

Advertisement

প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৪ রানে দুই উইকেটের পতন ঘটনো মোস্তাফিজও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। পরের দুই ওভারে দিয়ে বসেছেন ৩৫ রান। আগের ম্যাচেও ভাল বল করা পেসার রুবেল হোসেন ও অযথা খাট লেন্থে বল বেশি করে প্রচুর মার খেয়েছেন। তার ৪ ওভারে রান উঠেছে ৪১।

সে তুলনায় সবচেয়ে ভাল বোলিং করেছেন মিরাজ। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে এক উইকেট দখল করেছেন এ অফ স্পিনার। সন্দেহ নেই থিসারা আর কুশল পেরেরা দারুন খেলেছেন। দলের এমন বিপদে যত দৃঢ়তা দেখানো যায়, দেখিয়েছেন। যত ভাল শটস খেলা সম্ভব, খেলেছেন; কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের বোলারদের দায় আছে। মাত্র ৪১ রানে লঙ্কান ইনিংসের অর্ধেকটার পতন ঘটানোর পর বুদ্ধি খাটিয়ে জায়গামত বোলিং করতে পারেননি।

তারপর সবাই অতি মাত্রায় আক্রমনাত্মক হয়ে উইকেটের আশায় বল করতে গিয়ে উল্টো মার খেয়েছেন। তখন ভাল লাইন ও নিখুঁত নিশানায় বল করতে পারলে থিসারা ও কুশল পেরেরা অমন আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করতে পারতেন না। চার ও ছক্কার ফুলঝুরিও ছুটতো না।

কিন্তু দুই পেসার রুবেল আর মোস্তাফিজ বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে তাদের অফ স্টাস্পের বাইরর প্রচুর জায়গা দিয়েছেন। অনেক শর্ট বলও করেছেন। সেগুলো কাজে লাগিয়েই শেষ পর্যন্ত ধ্বংস্তুপ থেকে উঠে মোটামুটি লড়াকু পুঁজি গড়ে দিয়েছেন থিসারা আর কুশল পেরেরা।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর