আরিফ মইনুদ্দিন
Advertisement
নীরজা ভানৌত ভারতীয় মডেল ছিলেন। আর কর্মজীবনে ছিলেন ফ্লাইট এটেনডেন্ট বা কেবিন ক্রু। নীরজাকে নিয়ে লেখার একটাই কারণ অসাধারণ মায়াবী সুন্দর চেহারার এ নীরজার অতুলনীয় বীরত্ব। প্যান আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি প্লেনে নীরজা চিফ এটেনডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন জীবনের প্রথমবার। ফ্লাইট মুম্বাই হয়ে প্রথমে করাচি এবং সেখান থেকে যাবে ফ্রাঙ্কফুর্ট।
এই ফ্লাইট করাচিতে পৌঁছানোর পর ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের কবলে পড়ে। নীরজা ভানৌত একাই নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতা দিয়ে প্লেনের পাইলটদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফ্লাইটের প্রতিটি প্যাসেঞ্জারকে আগলে রাখেন। নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন অটলভাবে। জঙ্গিরা শেষের দিকে প্যাসেঞ্জারদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করলে নীরজা দ্রুত ইমার্জেন্সি এক্সিট খুলে দেন যাতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন অনেক প্যাসেঞ্জার।
নীরজা নিজেও পালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন অনেকবার। তবে প্রতিটি প্যাসেঞ্জারের নিচে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নিজে খুঁজে বের করে অনেকজনকে পালাতে সাহায্য করেন। সবশেষে, নিজে প্লেন থেকে বের হবার আগমুহূর্তে একটি শিশুর জীবন বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এ অকুতোভয় নারী। মারা যান নিজের ২৩তম জন্মদিনের মাত্র ২ দিন আগে। জন্মদিনের দিন সকালে দেশে আসে তার লাশ। আমি একজন ভীনদেশি মানুষ হয়েও প্রায়ই নীরজা ভানৌতকে নিয়ে লেখা নানান স্মৃতিকথাগুলো পড়ি। ইন্টারনেটে তার ছবি ঘাঁটাঘাটি করি এবং শেষমেশ প্রচণ্ড মন খারাপ করে বসে থাকি।
Advertisement
২৩ বছরের একটা ফুটফুটে মেয়ে, মানুষের জীবন বাঁচাতে বাঁচাতে নিজের জীবন দিয়ে দিলো। পাকিস্তান সরকার, ভারত সরকার নীরজাকে নানান রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করেন। সোয়া একশ কোটি মানুষের দেশ ভারত তাদের এই বীরকে ভোলেনি। মনে রেখেছে পরম শ্রদ্ধাভরে। নীরজার বীরত্ব নিয়ে কয়েকদিন আগেই নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। সেই চলচ্চিত্র জিতে নিয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।
মাত্র ১৭ থেকে ২০ কোটি মানুষের দেশ আমরা। আমাদের নীরজা না থাকলেও একজন পৃথুলা চেষ্টা করেছেন। আর আমরা তার সেই চেষ্টার প্রতিদান দিয়েছি তার প্লেন চালানোর যোগ্যতা নেই, সে অসভ্য মেয়েছেলে- এসব বলে।
অদ্ভুত এক জাতি আমরা। প্রতিহিংসা, অন্যের প্রতি ঘৃণা, অসম্মানে ভরপুর। তবুও এসব নোংরা মনের মানুষদের সঙ্গে যুদ্ধ করে যায় আমরাই। সংখ্যায় কম হলেও আমরা ঠিকই যুদ্ধ করে যাই। আগেও করেছি, ভবিষ্যতেও করবো।
আমাদের মৃত্যু নেই। নীরজা-পৃথুলাদের মৃত্যু নেই।
Advertisement
এইচআর/জেআইএম