১৯৬৩ সালেই চিকিৎসকরা ঘোষণা দিয়েছিলেন স্টিফেন হকিং আর দুই বছর বাঁচবেন। কিন্তু তারপর অলৌকিকভাবে বেঁচে রইলেন তিনি। তার মস্তিষ্ক থেকে প্রস্ফুটিত হলো যুগান্তকারী আবিষ্কার। অবশেষে ৭৬ বছর বয়সে তিনি দেহত্যাগ করেন। ১৪ মার্চ পরিবারের পক্ষ থেকে এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
Advertisement
জানা যায়, ‘মোটর নিউরন’ রোগে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সাধারণত রোগ ধরা পড়ার পর চার বছরের বেশি বাঁচেন না। স্টিফেন হকিংয়ের এই রোগ ধরা পড়েছিল ১৯৬৩ সালে। তারপরও ৫৫ বছর বেঁচে থাকা অলৌকিকতার চেয়ে কম কিছু নয়।
১৯৬৩ সালে টগবগে তরুণ ছিলেন স্টিফেন হকিং। চোখে হাজারো স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু সব স্বপ্নের যবণিকা টেনে মাত্র একুশ বছর বয়সে শারীরিক অক্ষমতা ধরা পড়ে তার। সে সময় চিকিৎসকরা তার আয়ু নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন দুই বছর। তবে ঘোষিত দুই বছর অতিবাহিত হলেও তিনি বিরাজ করছিলেন পৃথিবীতে। সে আশ্চর্যজনক বটে।
ত্রিশ বছর বয়সের আগেই তাঁর নড়াচড়া করার ক্ষমতা অনেকাংশে রহিত হয়ে যায়, স্থবির হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত কেবল হাতের একটি আঙুল নাড়ানোর ক্ষমতা ছাড়া সর্বোতভাবে অচল হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় নিজের দৃঢ় মনোবল আর প্রত্যয় দিয়ে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী, সর্বজন নন্দিত বক্তা হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেন। তাঁর লেখা বইও বিক্রি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ।
Advertisement
১৯৬২ সালে পিএইচ.ডির গবেষণাকর্মী থাকাকালে হকিং অসুস্থতার কথা প্রথম জানতে পারেন। ক্যামব্রিজে পিএইচ.ডি চলাকালীন হকিং মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ছুটিতে বাড়িতে আসার পর চিকিৎসক পিতা তাঁকে নিয়ে ছুটলেন বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে। তখন জানা যায়, তিনি আক্রান্ত হয়েছেন মটর নিউরন রোগে। স্নায়ুতন্ত্রের এ রোগ আস্তে আস্তে হকিংয়ের প্রাণশক্তি নিংড়ে নেবে। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, হকিং আর মাত্র দু-আড়াই বছর বাঁচবেন। তারপরের খবর পুরাই ইতিহাস।
১৯৮৫ সালে আবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন হকিং। ১৯৮৫ সালের গ্রীষ্মে জেনেভার সিইআরএনে অবস্থানকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকরাও তার কষ্ট দেখে একসময় লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। হকিংয়ের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র। সেখানেই এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘নিউমোনিয়ার ধকল আমি সহ্য করতে পারিনি, কোমায় চলে গিয়েছিলাম। তবে চিকিৎসকরা শেষ অবধি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন, হাল ছাড়েননি।’
হকিংয়ের এই অলৌকিক জীবনে জেন ওয়াইল্ড এক অনন্য ভলোবাসার নাম। কেননা হকিংয়ের আয়ু দুই বছর জেনেও বিয়ের আসরে বসেছিলেন জেন। ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের দিন আমন্ত্রিত অতিথিরা জানতেন উজ্জ্বল হাসিখুশি চেহারা, সোনালি ফ্রেমের চশমা পরিহিত এ যুবকের আয়ু মাত্র দু’বছর।
সব জল্পনা-কল্পনাকে পাশ কাটিয়ে তারপরও তিনি বেঁচে রইলেন আরো ৫৫ বছর। অবশেষে আজ ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অজানার উদ্দেশে। শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধের কাছে তো বটে, সবার কাছেই তিনি সেরা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম