‘কনফারেন্সটিতে অংশ নিতে একসঙ্গেই কাঠমান্ডু আসার কথা ছিল আমাদের। ওরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে না গিয়ে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে গেল। কে জানতো ফ্লাইট বদলের কারণে পৃথিবীর মায়া ছাড়তে হবে ওদের। কনফারেন্সে ওদের খুব মিস করেছি। দুইদিনের কনফারেন্সটি তাদের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়েছে।’
Advertisement
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী ও উম্মে সালমার মৃত্যুর সংবাদে ভারাক্রান্ত মনে জাগো নিউজের কাছে এসব কথা বলছিলেন কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ সেন্টার ফোর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক এ. আতিক রহমান। বাংলাদেশের মোট ৫ জন ‘রিজিওনাল সিমফজিয়াম অন ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস অ্যান্ড পোভার্টি অ্যালেভিয়েশন ইন সাউথ এশিয়া’তে অংশ নিতে নেপালে এসেছিলেন। বাকি দুইজন হচ্ছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ড. মো. নাদিরুজ্জামান এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের চিফ ইকোনমিস্ট গোলাম রসুল।
আতিক রহমান বলেন, আমাদের সবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে একসঙ্গে আসার কথা ছিল। ওরা দুইজন বললো বিমানের ফ্লাইট দেরি, সিডিউল ঠিক থাকে না। তাই বিমানের পরিবর্তে ইউএস বাংলার টিকেট কাটে তারা। গতকাল বিকেলে তাদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি হতবাক হই। আমরা যথারীতি আজ কনফারেন্সে যাই। ৪০টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে আয়োজিত কনফারেন্সে তাদের দুই জনের শূন্যতা কোনভাবেই পূরণ হচ্ছিল না। সব দেশের মেম্বাররা এক হয়ে তাদের স্মরণে শোক ও নীরবতা পালন করে। কনফারেন্সটি তাদেরকে উৎসর্গ করা হয়েছে। কনফারেন্সে ওদের খুব মিস করেছি। তাদের মৃত্যুর খবর শুনে তাদের স্বামীরা এসেছে শুনেই তাদের সঙ্গে দেখা করতে চলে আসি অ্যাম্বাসিতে।
ছবি-আতিক রহমান ও গোলাম রসুল
Advertisement
এর আগে সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চার ক্রু ও ৬৭ আরোহী নিয়ে বাংলাদেশি ইউএস বাংলার বিএস-২২১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিহতদের মধ্যে নাজিয়া আফরিন চৌধুরী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান। তিনি ২০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। রাজধানীর টিপু সুলতান রোড ওয়ারির বাসিন্দা নাজিয়া আফরিনের স্বামী ব্যবসায়ী মনিরুল হাসান। তারা ফার্মগেট এলাকায় থাকতেন। প্রকৌশলীতে পড়াশোনা করা নাজিয়া অস্ট্রেলিয়া থেকে মাস্টার্স করেছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী প্রধান উম্মে সালমার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দিমুলিয়া এলাকায়। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় থাকতেন তিনি। তার স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়া একজন চাকরিজীবী। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে।
তাদের সহকর্মী মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রধান শেখ মইনুল ইসলাম মঈন জাগো নিউজকে বলেন, তারা দুজনই ছিলেন মাটির মানুষ। প্রথম যেদিন আমি জিইডিতে জয়েন করি, সেদিন নাজিয়া ম্যাডামের রুমে বসে জয়েনিং লেটার লিখেছি। তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন। দুজনই ছিলেন ধার্মিক ও সৎ। কাজের প্রতি ছিলেন নিষ্ঠাবান। সব সময় সব কাজে সহযোগিতা করতেন।
তাদের সহকর্মী সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, তারা ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও সদালাপী। তাদের এভাবে চলে যাওয়া শুধু তার পরিবার বা জিইডি নয়, পুরো দেশের চরম ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
এআর/ওআর/জেআইএম