দেশজুড়ে

বাবা-মেয়ের মৃত্যুতে প্রজন্মের ইতি ঘটলো

ফারুক হোসেন প্রিয়ক, এফএইচ প্রিয়ক। ফারুকের বাবা শরাফত আলী মারা গেছেন প্রায় ৫ বছর হলো। শরাফত-ফিরোজা পরিবারের একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন। ছবি তোলার শখ ছোটকালেই তাকে জেঁকে ধরেছিল।

Advertisement

১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর রাজধানীর নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন প্রিয়ক। এরপর নেশা হিসেবে ফটোগ্রাফার পেশাকেই বেছে নেন।

পর্যটক হিসেবে স্ত্রী ও শিশু কন্যাসহ ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ১২ মার্চ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নেপালের উদ্দেশে রওনা দেন তারা। এ সময় তার সঙ্গে ছিল মামাতো ভাই মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা। কিন্তু নেপাল ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তার তিন বছর বয়সী একমাত্র শিশু কন্যা প্রিয়ংময়ী তামাররা।

মঙ্গলবার দুপুরে তাদের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিশেষ বিমানে নেপাল যাওয়া ফারুক হোসেন প্রিয়কের বন্ধু রফিকুল ইসলাম রাসেল। মুঠোফোনে তিনি প্রতিবেদককে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। বাবা ও মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের পরিসমাপ্তি ঘটল এ বিমান দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইউনির্ভাসিটি টিচিং হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দুজনের লাশ শনাক্ত করা হয়। অপরদিকে, ফারুক হোসেন প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি, মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণাকে কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ফারুকের বন্ধু তাজুল ইসলাম জানান, তার প্রবল ইচ্ছা ছিল আন্তর্জাতিক মানের একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। ছবি তুলে National Photo Contest 2016 পদক জিতে নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক পরিসরে ছবি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া। কিন্তু তার সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াল বিমান দুর্ঘটনা। ছবি পাগল মানুষটি এখন ছবির ফ্রেমেই বন্দি হয়ে গেলেন।

নিহত ফারুক হোসেনের মামা মশিউর রহমান নয়েছ জানান, ফারুক তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল। ফারুকেরও একমাত্র সন্তান ছিল প্রিয়ংময়ী। বাবা মেয়ে মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের প্রজন্মের পরিসমাপ্তি ঘটলো। এখন পরিবারের একমাত্র সদস্য হিসেবে রইলেন ফারুকের মা ও তার স্ত্রী।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার জানান, ঘটনার পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফারুকের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের খোঁজ নিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে নিহতদের মরদেহ দেশে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

Advertisement

এমএএস/আরআইপি