জাতীয়

ইসলামবাগের বাড়িটা আর মুখরিত হবে না সালমার পদচারণায়

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে উম্মে সালমা বুয়েট থেকে বেরিয়ে যোগ দেন পিডিবিতে। দুই বছর পর বিসিএস দিয়ে জয়েন করেন পরিকল্পনা কমিশনে। তিনি যখনই উত্তরার দক্ষিণখান ইসলামবাগের বাড়িতে আসতেন মুখরিত হতো চারিদিক। শিশুদের নিয়ে জমিয়ে দিতেন আড্ডা। তবে আজ সব খাঁ খাঁ করছে। উম্মে সালমার অকাল মৃত্যুতে বিষাদে ঢাকা পড়েছে যেন পুরো দক্ষিণখান।

Advertisement

উম্মে সালমা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। সোমবার সহকর্মীর সঙ্গে সরকারি কাজে নেপালের উদ্দেশ্যে ইউএস-বাংলার বিমানে চড়েন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাবা মৃত রায়হান আলীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল বাসাখানপুর থেকে ২০০৫ সালে স্বপরিবারে ঢাকা আসেন তারা। ভাড়া বাসা থেকে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন দক্ষিণখানের ইসলামবাগের হলান সড়কে। সেখানেই মূলত দীর্ঘ সময় পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন উম্মে সালমা।

মৃত্যুর খবর নিশ্চিতের পর মঙ্গলবার দুপুরে ১নং ওয়ার্ডের ৮৪নং বাইতুস সালাম নামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিঃশব্দ ভর করেছে বাড়িজুড়ে। লিচু গাছের পাতাও যেন নড়ছে না। বড় আঙ্গিনা জুড়ে শিশুরা খেলতো। সেখানে গতকাল বিকেল থেকে কোনো শিশু আর খেলছে না। ঝুলন্ত চেয়ারটা শুধু একাকি দুলছে।

Advertisement

মুঠোফোনে কথা বলায় ব্যস্ত বড় ভাই আনোয়ার সাদত বেরিয়ে আসেন ঘরের বাইরে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, উম্মে সালমা সরকারি চাকরির সুবাদে স্বামী-সন্তান নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি স্টাফ কোয়াটারে থাকতেন। প্রায়ই আসতেন এখানে। ও এলে মুখরিত হতো পুরো বাড়ি। বাচ্চারা মজে যেতো। ওকে পেলে খুশি হতো সবাই। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার খবরে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। এখনও আমরা বিশ্বাসই করতে পারছে না যে সালমা আর ফিরবে না।

আনোয়ার সাদত জানান, ওর নেপাল পৌঁছার কথা ছিল দুপুর দেড়টা-২টার মধ্যে। আমরা ৩টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পাই। মৃত্যুর খবরে ছুটে আসেন স্বজনরা। ওর মরদেহ আনতে নেপাল গেছেন বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ ও স্বামী মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়া। স্বামী আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার।

কথা হয় উম্মে সালমার মা ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে। তিনি বলেন, সালমার আড়াই বছরের মেয়ে সামারাকে নিয়ে কি করবো? কোনো সান্ত্বনায় কি মায়ের অভাব পূরণ হবে? ছোট্ট সামারা জানে না যে তার মা নেই। মা ফিরবে, খেলনা আনবে এ সান্ত্বনা দিয়েই সালমা নেপাল গেছে। আর ফিরবে না, সামারা আর মায়ের দেখা পাবে না ভাবতেই শিউরে উঠছি।

মা ফজিলাতুন্নেছা বলেন, মা হয়ে সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ শোনা বড় কষ্টের। ওর অভাব কখনো পূরণ হবে না। পরিবার তো বটেই, দেশ, সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হল।

Advertisement

মা বলেন, সালমাকে কাছে পেলে বাচ্চারা উৎফুল্ল হয়ে উঠতো। এভাবে সালমার মৃত্যু সবকিছুকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। খাঁ খাঁ করছে বাড়িটা। জেইউ/এএইচ/এমএস