জাতীয়

হেপাটাইটিস বি-সিতে প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১৪ লাখ মানুষ

নিরব ঘাতকব্যাধি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ১৪ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দুই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত মোট মানুষের সংখ্যা ৪০ কোটি। তাদের মধ্যে দেড় কোটি মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রতিরোধে টিকা থাকলেও সি ভাইরাসের কোন টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বে  লিভার ক্যান্সারে প্রতি বছর যত রোগী মারা যায় তার শতকরা ৮০ ভাগই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত থাকে। ভয়াল এ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত রোগ চিহ্নিত, সুচিকিৎসা নিশ্চিত তথা সার্বিক প্রতিরোধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য এখনই হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করো।রক্তের মাধ্যমে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ ও একই সিরিঞ্জে ইনজেকশন দেয়ার কারণে হেপাটাইটিস বি ও সি তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্বে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মাদকাসক্ত হেপাটাইটিস বি ও সিতে আক্রান্ত। যে সকল গর্ভবতী মা হেপাটাইটিস বি ও সিতে আক্রান্ত তাদের গর্ভজাত সন্তানরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত কারো সঙ্গে অনিরাপদ যৌনমিলন করলেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রক্তবাহিত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাসে ইনজেকশন দেয়ার আগে তা জীবানুমুক্ত করে নেয়া, রক্তদানের আগে এইচআইভি ও সিপিলিস পরীক্ষা করা এবং নিরাপদ যৌনমিলনে কনডম ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ অনিরাপদ ইনজেকশন ব্যবহারের কারণে হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর বিশ্বে ১৬ কোটি ইনজেকশন ব্যবহৃত হয়। তারমধ্যে শতকরা পাঁচ ভাগ টিকা, শতকরা পাঁচ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালণ ও জম্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত হয়। অবশিষ্ট শতকরা ৯০ ভাগ বিভিন্ন রোগের ওষুধ এর ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইনজেকশনের পরিবর্তে মুখে খাওয়ার নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে প্রতি বছর শিশুদের হেপাটাইটিস বি’র সংক্রমন থেকে বাঁচাতে টিকা দেয়া হয়। এ সময় ৭৮ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন বিশেষ করে জম্মের পর পর হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রথম টিকা ও পরবর্তীতে অন্যান্য টিকা দিলে ঝুঁকি আরো হ্রাস পাবে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগী, মাদকাসক্ত ও যৌনকর্মী তাদের হেপাটাইটিস বি টিকা দেয়ার ওপর গুরত্বারোপ করে। ১৯৮২ সাল থেকে এ যাবৎ হেপাটাইটিস বি টিকা দেয়ার ফলে এক কোটি লোকের লিভার ক্যান্সার ও লিভার সিরোসিসজনিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের যে সব দেশে প্রতি ১০ জনে এক জন হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতো সেখানে টিকা দেয়ার ফলে প্রতি ১০০ জনে এক জনের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি এর কোন টিকা আবিস্কৃত হয়নি।হেপাটাইসিস বি ও সি ভাইরাস ছাড়াও দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ ও ই তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে তা হেপাটাইটিসে মোট মৃত্যুর শতকরা এক ভাগেরও কম। এক নজরে হেপাটাইটিস ভাইরাস:১. হেপাটাইটিস এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা  ১৪লাখ২. হেপাটাইটিস বি  ভাইরাসে প্রতি বছর মারা যায় ৭ লাখ ৮০ হাজার৩. বি ভাইরাসজনিত সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারে  প্রতি বছর মারা যায় ৬ লাখ ৫০ হাজার৪. বিশ্বে  ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ক্রনিক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত৫. প্রতি বছর সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাস সংক্রমনে মারা যায়৬. তীব্র আকারের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে প্রতি বছর মারা যায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৭. হেপাটাইটিস ই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ৮. প্রতি বছর বিশ্বে ১৬ কোটি ইনজেকশন ব্যবহৃত হয়৯. অনিরাপদ ইনজেকশন ব্যবহারের কারণে ২০ লাখ বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়এমইউ/এসকেডি/এআরএস/এমএস

Advertisement