ঢাকাই সিনেমার নাম্বার ওয়ান হিরো বলেই খ্যাত শাকিব খান। তিনি এখন কলকাতার সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত। সম্প্রতি কলকাতাতেই কাটছে শাকিবের দিনরাত; মাসের ২৮ দিন সেখানেই থাকছেন। ঢাকায় আসছেন কেবল শুটিং থাকলেই। অবসরে কলকাতায় মঞ্চে মঞ্চে পারফর্ম করে বেড়ান।
Advertisement
কলকাতায় বাণিজ্যিক ছবির বাজার নেই। ধুকছেন ওখানকার প্রযোজক, নির্মাতা ও নায়ক-নায়িকারা। এমনি সময়ে যৌথ প্রযোজনার ‘শিকারী’ ও ‘নবাব’ ছবির সফলতার পর কলকাতার নির্মতা ও প্রযোজকরাও বাংলাদেশের সিনেমার বড় তারকা শাকিবকে নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের বাজার ধরতে বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে শাকিবের জুটি করে বানাচ্ছেন সিনেমা।
শাকিবও দুই বাংলার সুপারস্টার হবার বাসনায় গা ভাসিয়েছেন। যদিও দুই বছরে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে ও দর্শকের কাছে শাকিব আশানুরুপ সাড়া কোনোটাই পাননি। তাকে মূলত ঢাকায় প্রবেশের তুরুপের তাস হিসেবেই দেখছে ওপার বাংলার ‘মসলাদার’ সিনেমার সংশ্লিষ্টরা।
আগে ভরসা ছিলো যৌথ প্রযোজনা। তবে নতুন নিয়মাবলী যুক্ত হওয়ায় এই পদ্ধতিতে প্রচুর ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই আপাতত শাকিবকে নিয়ে ওপার বাংলার নির্মাণের ছবিগুলো বাংলাদেশে আসবে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি সাফটার আওতায়।
Advertisement
অর্থাৎ, শাকিবকে তার দেশের দর্শকেরা দেখবেন আমদানি করে! যেখানে শাকিবের জন্ম সেখানকার দর্শকরা তার ছবি সাফটা চুক্তিতে কতোটা গ্রহণ করবেন সেটা আলোচনার বিষয়। তবে যে চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন শাকিব নিজেও সেই চুক্তিতেও তারই গা ভাসানো দেখে মুখ টিপে হাসছেন অনেকেই। স্বার্থ বুঝি অনেক কিছুই ভুলিয়ে দেয়!
এদিকে চলচ্চিত্রপাড়ায় শাকিবের কলকাতায় স্থায়ী হওয়ার গুঞ্জন। কারণ, আবাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে এবার কলকাতাতে ফ্ল্যাট কিনছেন বলে শোনা যাচ্ছে। শাকিবের এই ফ্ল্যাট কেনার খবরেই ছড়াচ্ছে নানা কথা। ইদানিং ঢাকার বদলে কলকাতার নায়ক হওয়াকেই নিজের জন্য সুবিধার মনে করছেন এই অভিনেতা?
তার কলকাতা মুখী হওয়া ও নানা প্রশ্ন তৈরি হওয়ার পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণও আছে বৈকি। নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে কাছের মানুষদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে শাকিবের। স্ত্রী অপু বিশ্বাসের সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল আনুষ্ঠানিকভাবেই। এখানে কমে এসেছে সিনেমাও। শাপালা মিডিয়ার হাফ ডজনেরও বেশি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলেও ছবিগুলো নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন তিনি। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘আমি নেতা হবো’ শাকিবের নামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করতে পারেনি। নায়কের ব্যক্তিগত ঝামেলার প্রভাব পড়েছে জনপ্রিয়তাতে, বোঝা গেল বেশ স্পষ্টই। এর বাইরে ‘নোলক’ ছাড়া দেশীয় প্রযোজনার নতুন কোনো ছবি নেই শাকিবের হাতে। নিজেও করছেন না প্রযোজনা। স্বভাবতই, ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে কমেছে শাকিবের পিছুটান। থিতু হবেন কলকাতায়। দেশীয় প্রযোজনায় মনের মতো সিনেমা পেলে এখানে এসে কাজ করে যাবেন। অবশ্য, ঢাকায় খুব একটা শুটিং করেন না শাকিব। অংশ নেননা কোনোরকম প্রচারণাতেও। সেদিক থেকে ঢাকায় আসার খুব একটা প্রয়োজন পড়বেও না।
শাকিবের ঘনিষ্ট সূত্র আরও জানা গেল, যেহেতু অভিনয়টাকে তিনি নিয়েছেন জীবনের ব্রত করে তাই নির্বিঘ্নে নিয়মিত অভিনয় করতে চান সবরকম ঝামেলা ও সমালোচনা পাশ কাটিয়ে। সেজন্যই কলকাতাকে বেছে নিচ্ছেন নিজের বসবাসের জন্য নিরাপদ শহর হিসেবে। সেখানে এরইমধ্যে একটা বলয় তৈরি হয়েছে শাকিবের। কমার্শিয়াল সিনেমার ভাবনার মানুষদের সঙ্গে বেড়েছে সখ্যতা। সেই ভরসাতেই কিনতে চলেছেন ফ্ল্যাট; আপাতত তার কাছের মানুষদের সূত্র তাই বলছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, দেশের হিরোকে দেশের সিনেমা হলে আমদানি করে দেখার বিষয়টি দর্শক সহজে মেনে নেবেন কী না।
Advertisement
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা শাকিব খান ও শুভশ্রী অভিনীত ‘চালবাজ’ সিনেমাটিকে শুটিংয়ের সময় বলা হয়েছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি। এখন শোনা যাচ্ছে ভারতীয় ছবি হিসেবে এপ্রিল মাসে কলকাতায় মুক্তি পাবে ছবিটি। পরে সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। প্রথমে ছবির পরিচালক হিসেবে শোনা যায় দুইটি নাম কলকাতার জয়দীপ মুখার্জীর ও বাংলাদেশের অনন্য মামুনের। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত সিনেমাটির ট্রেলারে মামুনের নাম নেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রিভিউ কমিটি কমিটি থেকে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র হিসেবেও অনুমতি পায়নি ছবিটি।
প্রিভিউ কমিটির সদস্য পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘অনেক আগেই আমাদের কাছে অনুমতি চেয়ে স্ক্রিপ্ট জমা পড়ে এই ছবির। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বেশকিছু ত্রুটি পাই। যার কারণে যৌথ প্রযোজনার সিনামা হিসেবে অনুমতি দেওয়া হয়নি ‘চালবাজ’কে।’
অপেক্ষায় রয়েছে শাকিবকে নিয়ে সায়ন্তিকা ও নুসরাত জাহানের ছবি ‘মাস্ক’র মুক্তি। কলকাতার সবেচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ব্যানারে একক প্রযোজনাতেই ছবিটি নির্মিত হবে বাংলাদেশে। সাফটায় ছবিটি মুক্তি পাবে বাংলাদেশেও। এ ছবিটি নিয়েও আশাবাদী কলকাতার দুই নায়িকা। তারাও বুক বেঁধেছেন শ্রাবন্তী ও শুভশ্রীর মতোই সফল হবেন বাংলাদেশে, সেই আশাতে।
এর বাইরে শাকিব আরও দুটি সিনেমাতে কাজ করছেন শুভশ্রী ও সায়ন্তিকাকে নিয়ে। শ্রাবন্তীকে নিয়ে অভিনয় করছেন ‘ভাইজান এলো রে’ নামের ছবিতে। সেগুলোও সাফটায় আসবে। ভাবনার বিষয় হলো, সাফটায় ভারত থেকে আসা কোনো ছবিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারেনি। ওপার প্রসেনজিৎ, বাংলার জিৎ, দেব, অঙ্কুশ, সোহম, ঋতুপর্ণাি, শ্রাবন্তী, শুভশ্রীর মতো তারকারাও খালি হাতে ফিরেছেন। শাকিব কী নিজের দেশে ভিনদেশি হয়ে নায়ক হয়ে সফল হতে পারবেন? নাকি দেশ ছেড়ে বিদেশে সাফল্যের আশায় পা বাড়ানো শাকিব পুড়বেন অনুশোচনায়? উত্তর হয়তো মিলে যাবে একদিন।
এমএবি/এলএ/জেআইএম