বাংলাদেশের নতুন হেড কোচ নিয়ে রাজ্যের সংশয়। কে হবেন বাংলাদেশের নতুন হেড ও ব্যাটিং কোচ? তা নিয়ে রীতিমত ধুম্রজাল!
Advertisement
মিডিয়ায় বোর্ড সভাপতি ও পরিচালকদের উদ্ধৃতি দিয়ে গত দুই মাসে বেশ কিছু প্রতিবেদন হয়েছে। যেখানে বোর্ড কর্তারা ঘুরে ফিরে কয়েকটি নামই উচ্চারণ করেছেন। তাদের মুখে কখনো রিচার্ড পাইবাস, কোন সময় ফিল সিমন্স আবার নেইল ম্যাকেঞ্জির নামও উচ্চারিত হয়েছে।
সাবেক ক্যারিবীয় টেস্ট ক্রিকেটার ফিল সিমন্স এরই মধ্যে আফগানিস্তানের হেড কোচ হিসেবে যোগ দিয়ে ফেলেছেন। তিনি এখন পুরোদস্তুর আফগানদের কোচ। একই ভাবে রিচার্ড পাইবাসের সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও এ ইংলিশ কোচের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সম্পৃক্ত হবার কথাও শোনা যাচ্ছে। আর দক্ষিন আফ্রিকান সাবেক ক্রিকেটার নেইল ম্যাকেঞ্জিকে সম্ভবত ব্যাটিং কোচ করার পরিকল্পনা বিসিবির।
এরকম অবস্থায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কলম্বো বসে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হেড কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
Advertisement
এ রকম কথা বার্তা ও গুঞ্জন যখন চারিদিকে, তখন দেশে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নিয়েও জোর গুঞ্জন উঠেছিল। মিডিয়ায় বেশ কিছু দিন ধরেই বলা হচ্ছে, ঘরের ছেলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল থাকতে কেনইবা হন্যে হয়ে বাইরের কোচ খোঁজা?
এ নিয়ে মাঝে একপ্রস্থ হৈ চৈ হয়ে গেল। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির এশিয়ান ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান বুলবুলের সঙ্গে তারই খেলোয়াড়ী জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বর্তমান বিসিবি পরিচালক আকরাম খানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়ে গেল সম্প্রতি।
মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, আমিনুল ইসলাম বুলবুল জাতীয় দলের কোচ হতে আগ্রহী। তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় দলের সাথে কাজ করতে চান বুলবুল। সে প্রতিবেদনের পর জাতীয় দলের ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলে বসেন, আমরা তো বোর্ড থেকে বুলবুলকে কোচ হবার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু বুলবুল তাতে সাড়া দেননি।
বুলবুল তার কড়া প্রতিবাদ করে পাল্টা দাবি করেন, নাহ, বোর্ড কখনই আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলের কোচ হবার প্রস্তাব দেয়নি। এরকম অবস্থায় আজ আমিনুল ইসলাম বুলবুল ইস্যুতে নতুন করে মুখ খুললেন আকরাম খান।
Advertisement
ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যানের কথা শুনে মনে হচ্ছে, বিসিবি এখনই আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে জাতীয় দল পরিচালনার দায়িত্ব দিতে নারাজ। তার বদলে তারা বুলবুলকে অনুর্ধ্ব-১৯ কিংবা একাডেমির কোচের দায়িত্ব অর্পণ নিয়ে ভাবতে চান।
‘আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সম্ভাব্য কোচ করা নিয়ে বোর্ডের চিন্তা-ভাবনা কি?’ আজ দুপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আকরাম খানের কাছে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলে, তিনি অনেক বড় সড় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার সারমর্ম হলো, বুলবুলের দরজা খোলা। তবে তাকে আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। এবং আগ্রহী হলেও তাকে হয়তো প্রথমেই জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব হবে না। যুব দল (অনুর্ধ-১৯) আর একাডেমির হেড কোচ করা যেতে পারে।
অনেক কথার ভীড়ে আকরাম আরও একটি উপমা টানেন। তিনি বলেন, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো বিশ্ব মানের খেলোয়াড়ও ভারতের অনুর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হিসেবে কাজ করছেন। এ বিষয়ে আর কিছু না বললেও আকরাম বোঝাতে চেয়েছেন, তাহলে বুলবুল কেন যুব দলের কোচ হতে চাইবেন না?
আকরাম খান জাতীয় দলের কোচ হিসেবে বুলবুলকে নেয়া না নেয়া নিয়ে বলেন, ‘আমিনুল ইসলামের একটা প্রস্তাব এসেছিল। আজকে মনে করেন বোর্ডে আমরা যারা এসেছি আমি, দুর্জয়, সুজন; ইলেকশন করেই এসেছি। তাকেও আমরা মৌখিকভাবে বলেছিলাম। কিন্তু যেহেতু ও অস্বীকার করেছে, ডোর ইজ ওপেন।’
আকরাম খান অবশ্য ক্রিকেটার বুলবুলের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রশংসা করতে কার্পন্য করলেন না। তিনি বলেন, ‘বুলবুল বড় মাপের খেলোয়াড় ছিল, বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এখনও তার দেয়ার আছে। সে যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে, অবশ্যই আমরা এখানে নেব। আমাদের এখানে অনুর্ধ্ব-১৯ আছে, একাডেমি আছে, আমরা নেব। কিন্তু তার আগ্রহটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে সে সময় দিতে পারবে কি না, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’
তার মানে আপনারা বুলবুলকে জাতীয় দলের হেড কোচ করার চেয়ে যুব দল পরিচালনার দায়িত্ব দিতেই বেশি আগ্রহী। জাতীয় দলের হেড কোচ কেন নয়? এমন প্রাসঙ্গিক প্রশ্নর উত্তর দিতে গিয়ে আকরাম খান আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হেড কোচের জন্য যেমন অভিজ্ঞতা দরকার, বুলবুল এখনও তা অর্জন করেননি।
আকরামের ভাষায়, ‘এটা নির্ভর করছে করছে কিছু বিষয়ের ওপর। অভিজ্ঞতার কিন্তু একটা ব্যাপার আছে। যারা বাংলাদেশ টিমে আগে কোচিং করিয়ে গিয়েছে তাদের মতো অভিজ্ঞ কাউকেই দরকার। তা কিন্তু নেই।’ এটুকু বলেই আকরাম যোগ করেন, ‘রাহুল দ্রাবিড়ের মত খেলোয়াড় যদি অনুর্ধ্ব-১৯ দলের সাথে কাজ করতে পারেন...।’
এ কথার স্বপক্ষে যুক্তি জোরালো করতে আকরাম বলে ওঠেন, ‘আসলে জাতীয় দলের চাইতেও একটি দেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে দেশের যুব দল, একডিমি আর এইচপি হেড কোচ। ওখানে ভালো ট্রেনার ও কোচ দিতে হয়। প্রতিযোগিতাটা ওখান থেকেই আসে। আমরা জাতীয় দলের জন্য যেভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি ওভাবেই অনুর্ধ্ব-১৯ দলের বেলায়ও ভাবছি। বুলবুল যদি আগ্রহ প্রকাশ করে আর সেখানে এক দুই বছর ভাল করে তবে জাতীয় দলে চলে আসতে পারবে।’
আকরাম খানের কথায় পরিষ্কার, আপাতত কোন দেশি কোচের জাতীয় দল পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আকরাম খানের কথা হলো, ‘ দেশি সবাইকে দিয়েই ট্রাই করে দেখেছি।’
এক্ষেত্রে আকরামের শেষ কথা , ‘বুলবুলের ক্ষেত্রে যে কথাটি উঠেছে, ও যদি আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করবো। আর ও যদি না করে অন্য জায়গায় দেখবো।’
আকরাম আরও জানালেন, উন্নত মানের কোচের জন্য টাকা-পয়সা কোনো বিষয় না। এ সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘বোর্ড প্রেসিডেন্ট কিন্তু কোচিংয়ের ব্যাপারে উদার। সব ধরণের আর্থিক সহযোগিতা করতে চান তিনি। যত ভালো সম্ভব, উন্নত মানের কোচ আনারই চেষ্টা করব।’
দেশের আর কারো বিষয়ে উৎসাহ ও আগ্রহ নেই। কিন্তু বুলবুলের প্রতি তাদের আগ্রহের কারণ কি? জানতে চাওয়া হলে আকরাম খান বলেন, ‘হাথুরু কিন্তু শ্রীলঙ্কান। কিন্তু সে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে কোচিং করিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের কারও কিন্তু এ ধরণের অভিজ্ঞতা নেই, বা আমাদের কোচরা এ ধরণের সুযোগ নেবার চেষ্টা করেন না।’
দেশের বাইরে গিয়ে কোচিং করানোয় একটা আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার আছে। যদি অন্য দেশে গিয়ে ভালো করে, তাহলে তাকে বিবেচনায় আনা যায়। আকরাম জানালেন, যেহেতু বুলবুল দেশের বাইরে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও আইসিসির নানা গেম ডেভেলপমেন্ট ও কোচিং প্রোগ্রামের সাথে জড়িত, তাই তার কথা বিবেচনায় আনা হয়েছে।
আমিনুল ইসলামের পাশাপাশি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় জুনিয়র লেভেলে কোচিং করানো জাতীয় দলের আরেক সাবেক ক্রিকেটার মাহবুবুর রহমান সেলিমের দিকেও নাকি চোখ আছে বোর্ডের। এ সম্পর্কে আকরাম খান বললেন, ‘সেলিমও (মাহবুবুর রহমান) আছে। তবে ওর সময় লাগবে। এটা আমাদের মাথায় আছে। আসলে বাংলাদেশের যারা আছেন, তারা যদি বাইরে গিয়ে কোচিং করান, তাহলে আমাদের জন্য বিবেচনা করতে সুবিধা হয়।’
এআরবি/এমএমআর/আরআইপি