আইন-আদালত

খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ : এজলাসে দুই বিচারপতি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আজ আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। দুপুর ২টার পর এ আদেশের সময় নির্ধারিত রয়েছে।

Advertisement

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেবেন। দুপুর সোয়া ২টায় বিরতির পর দুই বিচারক এজলাসে ওঠেন।

গতকাল রোববার বিশেষ আদালতের রায়ের নথি হাইকোর্টে না পৌঁছায় আদালত আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নিম্ন আদালত থেকে রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়।

Advertisement

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন।

রোববারের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি এক নম্বরে ছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় বেঞ্চের দুই বিচারপতি আসনগ্রহণের পর অন্যান্য মামলার ম্যানশন করেন আইনজীবীরা। এরপর ঘড়ির কাঁটায় যখন ১১টা ৪৪ মিনিট তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের দীর্ঘ প্রথা ও এখতিয়ার আছে নথি ছাড়াই জামিন দেয়ার। আমরা চাই আজই জামিনের বিষয়ে আদেশ দেন।

এ সময় আদালত বলেন, এখতিয়ার আছে ঠিক। আমরা নথির জন্য আদেশ দিয়েছিলাম গত ২২ ফেব্রুয়ারি। বিচারিক আদালত আদেশের কপি হয়তো পেয়েছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে আজ ১৫ দিন শেষ হচ্ছে।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের কপি বিচারিক আদালতে পৌঁছায়। সেই হিসেবে ১৫ দিন পার হয়ে গেছে আগেই। আদালত বলেন, ‘আমার মনে হয় আজকের দিনটি আমরা দেখি। আদেশের জন্য সোমবার বিকেলে রাখলাম।’

Advertisement

তবে ওই বেঞ্চ সোমবার দিন ধার্য করার পর খালেদা জিয়াকে দেয়া নিম্ন আদালতের রায়ের নথি রোববার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে উচ্চ আদালতে পৌঁছে। নথির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৫৩৭৩।

খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদালত কী আদেশ দেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কারামুক্ত হতে পারবেন কি না- তা জানার জন্য সবাই এখন আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

রোববার আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

এছাড়া এজলাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল হক, শাম্মী আক্তার, কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমানসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের এই রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড স্থগিত চেয়ে পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। ওইদিন বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদার জামিন চেয়ে আপিল (আপিল নম্বর ১৬৭৬/২০১৮) করেন।

আপিল আবেদনে আদালতের দণ্ড থেকে খালাস চাওয়াসহ ৪৪টি যুক্তিসহ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দণ্ড স্থগিত চাওয়া হয়। এতে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটেবাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে আয়রন ঘাটতিসহ শারীরিকভাবে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।

২২ ফেব্রুয়ারি সকালে খালেদা জিয়ার পক্ষে একটি জামিনের আবেদন দাখিল করা হয়। এরপর ওইদিন আপিলের বিষয়ে শুনানি হয়। সেদিন আদালত আপিলটি ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করে নথি তলব করেন। নথি ১৫ দিনের মধ্যে তা উচ্চ আদালতে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অর্থদণ্ডের আদেশ স্থগিত করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আদালত বলেন, নথি হাইকোর্টে পৌঁছানোর পর আদেশ দেয়া হবে।

খালেদা জিয়ার জামিনের পক্ষে তার আইনজীবীদের যুক্তি হচ্ছে, ‘আপিলকারীর মাত্র পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। এক্ষেত্রে জামিন দেয়ার বিষয়টি একমাত্র আদালতের এখতিয়ার। এ ধরনের অল্প সাজার ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। তাছাড়া আপিলকারীর বয়স ৭৩ বছর। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।’

এর আগে আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য আইনজীবীরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘এ ধরনের অল্প সাজার ক্ষেত্রে জামিন দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। আদালত বিবেচনা করলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন।’

তবে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, ‘এ মামলায় আগেই জামিন নয়। দ্রুততার সঙ্গে পেপারবুক তৈরি করে এ মামলার আপিলের শুনানি করা হোক।

মামলার শুরু থেকে রায়

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই। মামলায় আসামির সংখ্যা মোট ছয়জন। ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। যুক্তিতর্ক শেষ করা হয় চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি। বিচারের সময়কাল ২৩৬ কার্যদিবস। মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি মোট ১৬ কার্যদিবস। সর্বশেষ রায় ঘোষণা ৮ ফেব্রুয়ারি।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দুদক এই মামলা করেছিল। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ।

অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সংসদ দসস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে পরস্পর যোগসাজশে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় অপরাধ।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

এমএআর/জেআইএম