রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বরে ইলিয়াছ আলী মোল্লা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বস্তিবাসীর সব স্বপ্ন ছাই করে দিয়েছে। এখন তারা নিঃস্ব। পরিবার নিয়ে জীবন নির্বাহের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছেন তারা।
Advertisement
আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বস্তিতে থাকা ব্যবহারের কিছুই বের করতে পারেনি অনেকেই। হাজার হাজার ঘর পুড়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে ঘর ছেড়ে সবাই বেরিয়ে আসলেও জীবনের অর্জিত সম্পদ বা প্রয়োজনীয় কিছুই বের করতে পারেননি অনেকেই। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বস্তিবাসীর বিলাপে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
আসমা খাতুন, কাজ করতেন একটি গার্মেন্টসে। সংসারের ভার ছিল তার ওপরেই। একটি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়েই ছিল তার সংসার। জীবন সংগ্রামে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসারের কোন জিনিসই বের করতে পারেননি তিনি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার সমস্ত স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি বিলাপ করে বলেন, আমার কেউ ছিল না। দেখতে পাচ্ছিলাম আগুনে সব কিছু পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই বের করতে পারলাম না। চোখের সামনেই সব পুড়ে ছাই হতে যেতে দেখতে হলো।
তিনি বলেন, আমি গার্মেন্টসে কাজ করি। কিন্তু অল্প আয়ের কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হয়, যে কারণে বস্তির ঘরে সেলাইয়ের কাজ করতে হতো। কাজ শেষ করে রাত দুইটার পর ঘুমাইছিলাম। মানুষের চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি বাইরে সব কিছু পুড়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে যাই। একমুঠো চালও বের করতে পারি নাই। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসারের সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আজ থেকে কি খাব, কই থাকব কিছুই জানি না। ভাত খাওয়ার জন্য একটি ভাতের প্লেটও আমার নেই। আমি আজ অসহায়, নিঃস্ব।
Advertisement
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
বস্তিবাসীর অনেকেই আবার পুড়ে যাওয়া কিছু জিনিস এনে বড় রাস্তার পাশে জমা করছেন আর বিলাপ করে কাঁদছেন। তাদের মধ্যে একজন সবুজ আহমেদ। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার পরিবার আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের কিছুই নেই। আগুন লাগার পর বেশির ভাগ মানুষই কিচ্ছু বের করতে পারেনি। আর গলি সরু হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও পুরোপুরি ঢুকতে পারেনি, যে কারণে ক্ষতি হয়েছে বেশি।
তিনি বলেন, টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণের গহনা সবই ছিল আমাদের কিন্তু কিছুই বের করে আনতে পারিনি। সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আমাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। রাস্তার ফকির এখন আমরা। পরিবার-সন্তান নিয়ে এখন কোথায় উঠব, কি খাব সবই অনিশ্চিত। আমাদের আর কিচ্ছু নাই, সব পুড়ে ছাই।
দৌড়ে দৌড়ে পুড়ে যাওয়া জিনিসের কিছু কিছু বের করে আনছিলেন বস্তিবাসী হায়দার হোসেন। তিনি বলেন, সব কিছু পুড়ে যাওয়ায় এখন তো আর কিছু নাই। তাই নিজের ঘরের জায়গায় ঢুকে পুড়ে যাওয়া কিছু জিনিস বের করার চেষ্টা করছি। সামনের বড় রাস্তা বস্তিবাসীর পুড়ে যাওয়া জিনিসে ভরে গেছে। তারাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা। যে কারণে সবাই ওসব পুড়ে যাওয়া জিনিস বের করে রাস্তায় জমা করছে। বস্তিসংলগ্ন মিরপুর ১২ নম্বরের বড় রাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, বস্তিবাসীর হাজার হাজার পরিবারের সদস্য তাদের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র রাস্তায় এনে জমা করছেন। জীবন নির্বাহের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে বিলাপ করছেন সব হারানো এসব মানুষ। সোমবার সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বরে ইলিয়াছ আলী মোল্লা বস্তিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিটের চেষ্টায় সকাল ৭ টা ২৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিফিল ডিফেন্স অধিদফতরের ডিউটি অফিসার মাহফুজুর রহমান। তবে আগুনের ঘটনা ভয়াবহ হওয়ায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশ কিছু সময় লাগে।
Advertisement
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী মোল্লা জানান, বস্তিটিতে বসবাস করেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ঘর রয়েছে সাত থেকে আট হাজার। বস্তির ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘বস্তিটিতে ৮ হাজারের বেশি ঘর রয়েছে। যতটুকু ধারণা করা যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ঘর পুড়ে গেছে।
এএস/ওআর/জেআইএম