সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁওয়ে নির্মম পৈশাচিক নির্যাতনে খুন হওয়া শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বাবার সঙ্গে থানা কম্পাউন্ডে দুর্ব্যবহার, মামলা নিতে গাফিলতি ও আসামিদেরকে ‘উৎকোচে’র বিনিময়ে রক্ষার চেষ্টার অভিযোগে জালালাবাদ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে প্রত্যাহার ও দুইজন উপ-পুলিশ পরিদর্শককে (এসআই) বরখাস্ত করা হয়েছে।বরখাস্তকৃতরা হলেন, জালালাবাদ থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও আসামি কামরুল ইসলামসহ আসামিদেরকে ‘উৎকোচে’র বিনিময়ে রক্ষার চেষ্টার অভিযোগ তদন্তে পুলিশের উচ্চপদস্থ ৩ কর্মকর্তাকে দিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনটি পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসানের কাছে জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান। তদন্ত কমিটির প্রধান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন জানান, ‘তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর দোষী পুলিশদের প্রতি দ্রুত গতিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন পুলিশ কমিশনার।তিনি বলেন, এ ঘটনায় এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে আর জালালাবাদ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে এ ঘটনায় প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার ওসি আলমগীরকে বরখাস্ত করার জন্য পুলিশ হেডকোয়াটারে লিখিত সুপারিশ পাটিয়েছেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. রোকন উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য দুইসদস্য ছিলেন, উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুশফেকুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা। প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁওয়ে খুঁটিতে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন করে খুন করা হয় সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেয়ালি গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে ১৩ বছর বয়সী শিশু রাজনকে।হত্যার পর অভিযোগ ওঠে, ওইদিন রাতে রাজনের বাবা আজিজুল ইসলাম জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলাম তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে এসআই আমিনুল তাকে গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।পরে পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা মিলে ফোনে রাজনের খুনিদের সাথে ফোনে কথা বলেন। রাজনের পরিবারের অভিযোগ ওসি আলমগীর ও এসআই আমিনুল মিলে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে রাজনের প্রধান ঘাতক কামরুলকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। পুলিশের এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর এসআই আমিনুল ইসলামকে জালালাবাদ থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। এছাড়া অভিযোগ তদন্তে গত ১৪ জুলাই মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।তিন দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় কমিটি তদন্তের মেয়াদ আরও ৫ দিন বর্ধিত করেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।ছামির মাহমুদ/এমএএস/পিআর
Advertisement