লোকে তাঁকে পাগল হিসেবেই চিনত। দূর থেকে দেখে হাসত, কাছে গিয়ে বিদ্রুপ করত। কেউ বা দুঃখ পেয়ে সমবেদনা জানিয়ে বলত আহা, বেচারা!
Advertisement
তিনি সবই দেখতেন, সবই শুনতেন। মনে মনে হাসতেন। ভাবতেন, পাগলের ভান করলে যদি বেঁচে থাকা যায় তো সে-ই ভাল।
কেন এরকম পাগল হতেন তিনি? কারোর বাড়া ভাতে ছাই না ঢেলে কেবলি বিজ্ঞানের সাধনায় মেতে থাকার আনন্দ চেয়েছিলেন জীবনে। অসাধারণ প্রতিভাধর বিজ্ঞানী ছিলেন। আজকের পৃথিবী তাঁর নামের আগে একটি উপাধিও বসিয়ে দিয়েছে। উপাধিটি এরকম- আলোক বিজ্ঞানের জনক- ‘Father of Optics.’
বুঝতেই পারছেন, তিনি কে। এ কালের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ আলোক বিজ্ঞানের জনক বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছামকে স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সাথে। কিন্তু শুধুমাত্র আলোক বিজ্ঞান নয়, তিনি খ্যাতিমান জ্যোতির্বিজ্ঞানী, শারীরতত্ত্ববিদ, প্রকৌশলবিদ, গণিতবিদ, ওষুধশাস্ত্রবিশারদ, চক্ষুরোগ বিশারদ, দার্শনিক, পদার্থবিদ, মনোবিজ্ঞানী ইত্যাদি হিসেবেও।
Advertisement
তবে তাঁর বিজ্ঞান-গবেষণার বিষয়, আবিস্কৃত তথ্য অনেক সময়ই প্রচলিত ধারণার সাথে মিলত না। তখনি রেগে যেত তাঁর সময়ের গোঁড়া, অন্ধবিশ্বাসী ও কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষজন। তাঁর প্রতিভার ঝলক ও ছড়িয়ে পড়া খ্যাতির ব্যাপ্তি দেখে ঈর্ষাও করত অনেকে। কেউ কেউ তাঁকে হত্যা করারও হুমকি দিয়েছিল। নিহত হওয়ার ভয়ে অথবা নিহত না হওয়ার উপায় হিসেবে তিনি সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে ‘পাগল’ সেজে থাকতেন। কৌশলটি কাজে লেগেছিল নিশ্চয়। কেননা, তিনি বেঁচে ছিলেন এবং স্বাভাবিক মৃত্যুলাভের সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর।
বলা হয়, বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে কিতাব আল-মানাজির (আলোকবিজ্ঞানের বই, ল্যাটিন ভাষায় De Aspectibus)| পাশ্চাত্যে আলোক বিজ্ঞান নিয়ে আধুনিক গবেষণার সূত্রপাত ঘটিয়েছে এই বইটি। সত্যি বলতে কি, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণগত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে (Experimental Scientific Method) গবেষণার কৌশল শিখিয়েছেন তিনিই। আর তাই তাঁকে বলা হয় বিশ্বের ‘প্রথম বিজ্ঞানী’।
কিতাব আল-মানাজির-কে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম প্রভাব সৃষ্টিকারী বই, বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটনের Philosophiae Naturalis Principia Mathematica-এর উপরে স্থান দেওয়া হয়। কেননা, এই বইটি আলোকবিজ্ঞান এবং মানুষের চোখের দেখতে পারার কৌশলের সত্যিকার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা প্রদান করে বিপ্লব সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিল।
শুধুই ব্যাখ্যাই নয়, কিতাব আল-মানাজির-এ বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছাম সর্বপ্রথম দৃশ্যকৌশলের মনস্তত্ত্ব দৃষ্টিবিভ্রম, পরীক্ষণ মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আধুনিক কালে আবিস্কৃত হওয়া ক্যামেরা, টেলিস্কোপ এবং মাইক্রোস্কোপের প্রথম ধারণা ও বাস্তব বর্ণনা দিয়েছিলেন। বইটি চক্ষু-সার্জারির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত।
Advertisement
কিতাব আল-মানাজির লেখা না হলে লেন্স, দর্পণ, প্রতিফলন, প্রতিসরণ, আলোর বিচ্ছুরণে দৃশ্যমান সাতটি রং-এর রহস্য হয়তো আরো অনেক দিন অজানা থেকে যেত। হয়তো আলোকবিজ্ঞানকে এত দ্রুত আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হত না। চোখ কি দেখছে, অর্থাৎ দৃশ্যমান বস্তুটি, সেই সাথে দৃশ্যমরিচিকার বিষয়টিও মানুষের মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করে, এই যুগান্তকারী তত্ত্ব প্রদানের জন্য কেউ কেউ তাঁকে পর্যবেক্ষণ নির্ভর মনোবিজ্ঞানের জনক হিসেবেও মানেন।
বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছাম-ই প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন ছোট্ট ছিদ্রপথ দিয়ে আলো কিভাবে বিপরীত দিকের দেয়ালে বা কাগজে বা কোন তলে দৃশ্যকে দৃশ্যমান করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘camera obscura’ লেন্সের ম্যাগনিফাইং শক্তির ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনিই প্রথম। সবচেয়ে প্রথম জড়তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনিই। বিজ্ঞানী আউজাক নিউটন গতির দ্বিতীয় সূত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যে ভরবেগের কথা বলেছেন, সেই ভরবেগের ধারণা আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছাম। ‘আলহাজেন সমস্যা’-র উপস্থাপনা করেছেন বিজ্ঞানী হাইছাম। জ্যামিতির সাহায্য নিয়ে ক্যালকুলাস এবং গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে এর সমাধানও দিয়েছেন তিনি। ভরসমূহের মধ্যকার আকর্ষণকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি।
দূরত্বের সাথে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন ভরের বস্তুর পতনের দ্রুততা বিভিন্ন হয়- তিনি অংক করে তা দেখিয়েছিলেন। মহাকাশের সবকিছু পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে- বলেছিলেন তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে। গ্রিক বিজ্ঞানী টলেমির জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ঠিক পথে আনার কৃতিত্ব তাঁর। তিনি গ্রীক বিজ্ঞানের হারিয়ে-যাওয়া ইতিহাসকে পুনর্জীবন দান করেছেন। এরিস্টোটল, টলেমি এবং ইউক্লিডের বিজ্ঞান তথ্যগুলোর সমালোচনা করার মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে গ্রিক বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান- কর্মকে তুলে এনেছেন পাদ প্রদীপের আলোয়। অথচ এগুলোর কথা ততদিনে আর কেউ মনে রাখেনি।
টলেমির কাজ নিয়ে তিনি বেশি আলোচনা করেছেন। এজন্য তাঁর নাম হয়েছে ‘Ptolemaeus Secundus’ বা দ্বিতীয় টলেমি। মধ্যযুগের ইউরোপে পদার্থবিজ্ঞানী বলতে কেবল মাত্র আলহাজেনকেই বোঝাতো। তাঁর সম্মানে চাঁদের একটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের নাম রাখা হয়েছে ‘আলহাজেন’। মহাকাশের এক উল্কাপিন্ডের নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা Asteroid 59239 Alhazen. বিজ্ঞানী এস. স্পসেট্টি আবিষ্কার করেছিলেন এই উল্কাপিন্ডটিকে।
এই রকম একজন বিজ্ঞানীকে তবে কেন পাগল সাজতে হয়েছিল ¯স্রেফ বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে? এর পেছনের কারণটা শুনতে হলে আরো কিছু বিষয় জানা দরকার।
মুসলিম বিজ্ঞানীরা সেই ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম দিকেই ভারতবর্ষ, চীন ও গ্রীক বিজ্ঞানীদের সম্বন্ধে জেনেছিলেন। তবে তাঁদেরকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল হারিয়ে যাওয়া গ্রীক সভ্যতার বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে লেখা বই। গ্রীক সভ্যতার উৎস ছিল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ও সিরিয়ার কয়েকটি নগর।
অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকে গ্রীক বিজ্ঞানীদের সম্বন্ধে আলোচনা প্রথমে শুরু হয় এই জায়গাতেই। আরো ভাল করে বললে বলতে হয়, তাইগ্রিস-ইউফ্রেতিস নদীর তীরে অবস্থিত কুফা ও বসরা নগরীতে। মুসলিম রাজ্যের আর কোথাও তখনো এসব আলোচনা শুরু হয়নি। গ্রীক বিজ্ঞান আরো ভাল করে জানার জন্য বিজ্ঞানীদের বই আরবিতে অনুবাদ করার প্রয়োজন পড়ে। মুসলিম শাসকরা ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহ জোগাতেন। এমনকি এ কাজে সাহায্য করার জন্য দশম শতাব্দীর শেষ ভাগে বসরার খালেদ ইবনে আহমদ গ্রীক-আরবি অভিধান প্রণয়ন করেন।
এভাবেই মুসলিম বিজ্ঞানী তথা আরবরা গ্রীক বিজ্ঞানী ইউক্লিড, এরিস্টোটল, টলেমি প্রমুখের নাম জানতে পারে। তাঁদের কাজ সম্বন্ধে জানার উৎসাহ আসে। উৎসাহটা একসময় সত্যি সত্যিই বাতিকে পরিণত হয়। তাঁরা যা যা বলেছিলেন, তাকেই ধ্রুব সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেন মুসলিম বিজ্ঞানীরা। আর সাধারণ মানুষ তো অতসব বোঝে না। তারা তথ্যগুলোকে সত্য হিসেবে মানতে মানতে এক সময় বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় সত্যগুলোর সাথে গুলিয়ে ফেলল।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। গ্রীক বিজ্ঞানীরা মানুষ কীভাবে দেখতে পায়, সে সম্বন্ধে তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে বলেছিলেন, চোখ থেকে আলো বের হয়ে বস্তুর উপর পড়ে বলেই মানুষ দেখতে পায়। মানুষের দর্শন ক্ষমতা নিয়ে প্রথম আইডিয়া এসেছিল গ্রিক দার্শনিক এমপেডক্লিসের কাছ থেকে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ সালে। এমপেডক্লিস যুক্তি দেখালেন যে, গ্রিক দেবী আফ্রোদিতি মানুষের চোখে আলো জ্বেলে দেন, চোখের ভেতরকার আগুন থেকে ঠিকরে পড়া আলোকরশ্মি বস্তুকে আলোকিত করে তুলে। তখন-ই মানুষের মনে দেখার অনুভূতি জন্মায়।
এই যুক্তি সবাই যে খোলা মনে মেনে নিতে পেরেছিল, তা নয়। বহু তর্ক-বিতর্কের পরও একে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি ১০০০ সাল অবধি। ভাগ্যিস, এর পর আলহাজেন বা বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছামের জন্ম হয়েছিল, যিনি সত্যিকারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক দর্শন-তত্ত্বকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর জন্য কম মূল্য দিতে হয়নি তাঁকে।
গ্রিক দার্শনিকের তত্ত্ব দারুণ ভাবে বিশ্বাস করেছিল মুসলিম বিশ্বও। ইবনুল হাইছাম সজোরে এই বিশ্বাসের গায়ে আঘাত হানেন। মানুষের চোখ থেকে আলো বের হয়, এই তথ্যটি শুধুমাত্র একটি তথ্য, এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু যত দিন যেতে লাগল, মানুষ ভাবতে লাগল, এটাই ধ্রুব সত্য। বিজ্ঞানের তথ্য ভুল প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু তারা ভাবল, এসবের কোন অন্যথা হওয়া অসম্ভব। আল্লাহ্ এভাবেই মানুষকে দেখতে সাহায্য করেন। গ্রিক দেবী আফ্রোদিতির শক্তিকে বিশ্বাস করেছে গ্রিকরা, আল্লাহ্ পাকের বিশ্বাসে বলীয়ান মুসলিমরা আল্লাহর শক্তির নমুনা হিসেবে বিষয়টিকে বিশ্বাস করেছিল। তৈরি করেছিল বিভ্রান্তি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্মীয় নেতারা সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য এগিয়ে না এসে বরং আরো উস্কানি দিতে লাগলেন। এইরকম অন্ধবিশ্বাসী, কুসংস্কারচ্ছন্ন ধর্মীয় নেতারা বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছামকে ধর্মদ্রোহী বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কারণ বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছাম বলেছিলেন, আলো বস্তুর গায়ে ঠিকরে পড়ে আমাদের চোখে আসে এবং আমাদের দর্শন-অনুভূতিকে জাগিয়ে দেয় বলেই আমরা দেখতে সক্ষম হই।
প্রচুর সময় ব্যয় করেছিলেন ইবনুল হাইছাম এই বিষয়টির উপর গবেষনা করতে গিয়ে। একটি অন্ধকার ঘরের দেয়ালে ছোট্ট একটি ছিদ্র করেছিলেন। ছিদ্রের ওপাশে, দেয়ালের বাইরে ভিন্ন উচ্চতায় ঝুলিয়ে দিলেন দু’টি লন্ঠন। ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখলেন, প্রতিটি লন্ঠন থেকে আলোক রশ্মি ঐ ছিদ্রপথ দিয়ে ভেতরে ঢুকে ভেতরের দেয়ালে ভিন্ন নকশা তৈরি করছে। কোন একটি লণ্ঠনকে ঢেকে দিলে যে নকশা তৈরি হচ্ছিল, তা অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছিল। ঢাকনা সরিয়ে দিলে ফিরে পাওয়া যাচ্ছিল নকশাকে।
এর অর্থ কি?এর অর্থ তো এটাই, মানুষের চোখ থেকে আলো বের হয়নি, হয়েছিল লন্ঠন থেকে। লন্ঠন বা বস্তু আলো ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। আর এই ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি ঘটছে সরল রেখায়। এখনকার সময়ের প্রেক্ষিতে আলহাজেন-এর এই গবেষনাকে ছেলেখেলা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কুসংস্কারের বুকের উপর দাঁড়িয়ে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান কিন্তু ছিল বিশাল ঘটনা। বস্তুগত সম্পর্কের (বস্তু থেকে আলো বের হচ্ছে) পর্যবেক্ষনের উপর ভিত্তি করে তিনি বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর এই ধারণাকে সত্যে পরিণত করার জন্য গবেষণা শুরু করেন। তাঁর এই ধাপগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের পথকে সুস্পষ্ট করে দিয়েছিল পরবর্তী কালের বিজ্ঞানীদের জন্য।
স্যার আইজাক নিউটন এই পথ ধরেই প্রমাণ করেছিলেন, আলো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। বৃটিশ প্রকৃতিবিদ রবার্ট হুক (লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির গবেষণা কাজের কিউরেটর শীর্ষক আকর্ষনীয় পদের অধিকারী ছিলেন তখন) ভিন্ন মতবাদ প্রকাশ করে বললেন, আলো বেতার তরঙ্গের মতই এক ধরনের তরঙ্গ। ১৮০১ সালে বিজ্ঞানী থমাস ইয়ং আলহাজেনের মতই অন্ধকার ঘরকে গবেষণার জন্য বেছে নিয়ে জানালার আচ্ছাদনের ভেতরকার ছোট্ট গর্ত ব্যবহার করে আয়নার সাহায্যে আলোকে কাগজের মত পাতলা কার্ডের উপর ছড়িয়ে দিলেন।
এই ছড়িয়ে পড়া আলোর বীম একটি পর্দায় ছুঁড়ে দিয়ে আলোক তরঙ্গের ধারনাকে সুস্পষ্ট করলেন। এরও প্রায় ১০০ বছর পর, ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বিতর্কের সমাপ্তি টানলেন এই বলে যে, আলো আসলে তরঙ্গ এবং কণার তৈরি- উভয়ই বৈশিষ্ট্যধারী। আইনস্টাইনের দ্বৈত তরঙ্গ-কণা তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা গ্রহন করেছেন। এখনো গবেষণা চলছে আলোকে আরো ভাল ভাবে বোঝার জন্য। আইনস্টাইন বলেছিলেন, আলোর গতি অপরিবর্তনীয় এবং চরম সত্য।
যদিও ১৯৯৮ সালে বিজ্ঞানী লেনে হাউ-এর নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী দেখিয়ে দিয়েছেন যে, বিশেষ অবস্থায়আলো এর সাধারন গতি থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩ঢ১০৮ মিটার থেকে ১৭ মিটার কম গতিতে ভ্রমণ করতে পারে। আলো নিয়ে আধুনিকতম যত গবেষণা হচ্ছে, তার অনেকগুলোতেই বিজ্ঞানী বেছে নিচ্ছেন আলহাজেনের সে-ই অন্ধকার ঘর আর ছোট্ট ছিদ্রের সরলতম উপকরণ, যা প্রমাণ করে এখনো আলোকে বুঝতে হলে আলহাজেনের অনুসৃত পথকে বেছে নিতে হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানীদের।
আলো সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছি আমরা। এত সব কিছু সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছামের সত্য ভাষনের জন্য, এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় আছে কি? কিন্তু, সে কালে, বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছামের কালে কি হচ্ছিল? ইবনুল মারাসতানিয়া নামে বাগদাদে একটি মসজিদ ছিল। সেই মসজিদের ইমাম ছিল ওবায়দুল্লা আত্তামিয়া।
বাগদাদের এক চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে ওবায়দুল্লা প্রায়ই গলা ফাটিয়ে মন গড়া ঘোষণা দিত যে, হাইছামের বিজ্ঞান ধর্মের বিরুদ্ধে ! অদ্ভুত অদ্ভুত সব যুক্তি সাজিয়ে, তর্ক করে প্রমাণ করতে চাইত যে, তাঁর প্রদত্ত বিজ্ঞানের সত্যগুলো পবিত্র কুরআনের বক্তব্যকে ভুল বলতে চাইছে।
লোকটার হাতে থাকত ইবনূল হাইছামের আলোকবিজ্ঞান সম্বন্ধে লেখা বই ‘ কিতাবুল মানাজির ’।
লেখক : কথাসাহিত্যিক।
এইচআর/জেআইএম