জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশের দিন পিছিয়ে সোমবার ধার্য করেছেন উচ্চ আদালত। এ মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন।
Advertisement
জামিনের আদেশ দেয়ার সময় পর্যন্ত বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে না পৌঁছায় রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদালত কী আদেশ দেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কারামুক্ত হতে পারবেন কিনা- তা জানার জন্য সবাই এখন আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
রোববারের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি এক নম্বরে ছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় বেঞ্চের দুই বিচারপতি আসনগ্রহণের পর অন্যান্য মামলার ম্যানশন করেন আইনজীবীরা। এরপর ঘড়ির কাঁটায় যখন ১১টা ৪৪ মিনিট তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের দীর্ঘ প্রথা ও এখতিয়ার আছে নথি ছাড়াই জামিন দেয়ার। আমরা চাই আজই জামিনের বিষয়ে আদেশ দেন।
Advertisement
এ সময় আদালত বলেন, এখতিয়ার আছে ঠিক। আমরা নথির জন্য আদেশ দিয়েছিলাম গত ২২ ফেব্রুয়ারি। বিচারিক আদালত আদেশের কপি হয়তো পেয়েছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে আজ ১৫ দিন শেষ হচ্ছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের কপি বিচারিক আদালতে পৌঁছায়। সেই হিসেবে ১৫ দিন পার হয়ে গেছে আগেই। আদালত বলেন, ‘আমার মনে হয় আজকের দিনটি আমরা দেখি। আদেশের জন্য সোমবার বিকেলে রাখলাম।’
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, এর আগে আমরা আদালতে বলেছিলাম, উনারা কতজন আইনজীবী থাকবেন আর আমরা কতজন থাকব।
‘উনারা মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে আইনজীবীদের এখানে এনেছেন’ উল্লেখ করে তিনি নিজের মোবাইল ফোনে আসা এ সংক্রান্ত মেসেজ আদালতকে দেখান। তখন আদালত হাস্যরসের সঙ্গে বলেন, ‘উনারা হয়তো আপনাকে উপস্থিত থাকার জন্য মেসেজ দিয়েছেন।’ পরে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার বিকেল দিন ধার্য করেন।
Advertisement
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এ ছাড়া এজলাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল হক, শাম্মী আক্তার, কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমানসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে নথি আসার সময়সীমা শেষ হয়েছে বলে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরে আদালত জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য রোববার (১১ মার্চ) দিন ধার্য করেন।
জানা গেছে, মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে পৌঁছেছে। সে মোতাবেক ১৫ দিন শেষ হবে আজ (১১ মার্চ)।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড স্থগিত চেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল আবেদনে আদালতের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৪টি যুক্তি দেখানো হয়। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দণ্ড স্থগিত চাওয়া হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, বিচারিক আদালতের দেয়া জরিমানার আদেশও স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জামিন চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য রাখেন আদালত।
আদেশে এ মামলায় বিচারিক আদালতের নথি তলব করে ১৫ দিনের মধ্যে তা উচ্চ আদালতে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শেষে আদালত বলেছিলেন বিচারিক আদালতের নথি আসার পর আদেশ দেবেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এ টাকা প্রত্যেককে সমানভাবে দিতে হবে। রায়ের পর থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটেবাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে আয়রন ঘাটতিসহ শারীরিকভাবে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
এফএইচ/এমএমজেড/পিআর