রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘ইংলিশ ভার্সনে’ শিক্ষক নিয়োগে ‘নিয়োগ বাণিজ্যের’ অভিযোগ উঠেছে। যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রার্থী।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুলের মুগদা, বনশ্রী ও মতিঝিলে দিবা-প্রভাতী শাখায় ৫৫ জন শিক্ষক ও ৬ জন অফিস সহকারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই লক্ষ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সেখানে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। পরে পূণরায় সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আইডিয়াল স্কুলের তিন শাখায় বিভিন্ন বিষয়ে ৫৫ জন শিক্ষক ও ৬ জন অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়া হবে।
সংশোধীত বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার সময় অনুযায়ী গত শুক্রবার (১০ মার্চ) আইডিয়াল স্কুলের বিভিন্ন শাখায় এ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার দিনেই ফল ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা একদিন পিছিয়ে শনিবার সকালে ফল প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ফল প্রকাশের পরেই নির্বাচিত প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয় এবং দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে মৌখিক পরীক্ষা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিয়োগ প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করলেও অনেক প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেককে আবার পরীক্ষায় খারাপ করেও টাকার বিনিময়ে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছে। এ কারণে আমরা ভালো পরীক্ষা দিয়েও নিয়োগ থেকে বাদ পড়েছি।
Advertisement
তারা বেশ কয়েকজন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম উল্লেখ করেন এবং নিয়োগ পরীক্ষার আগেই তাদের (নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক) হাতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন।
সূত্রে জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুলে নিয়োগ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। একাধিক সিনিয়র শিক্ষক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সদস্যদের একটি সিন্ডিকেট এ নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। অযোগ্য প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে ফল প্রকাশে বিলম্ব নিয়েও। বলা হচ্ছে, মূলত নিয়োগ বাণিজ্যের জন্যই বিজ্ঞপ্তির একদিন পরেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে এবং একদিন পর ফল প্রকাশ করেই মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়। তড়িঘড়ি করে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় ‘অযোগ্য’ ব্যক্তিদের চূড়ান্ত করায় স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে অভিভাবক ফোরামের সভাপতি রেজাইল কবির দুলু বলেন, একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েও শিক্ষক নিয়োগের নামে এভাবে বাণিজ্য করায় প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। অযোগ্য লোকদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া ফলে স্কুলটির শিক্ষার মান নষ্ট হয়ে যাবে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে সন্তানদের স্কুলটিতে ভর্তি করিয়েছি তা সফল হবে না। ফলে এ নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তবে এ বিষয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম জাগো নিউজকে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে নিয়োগ কমিটি করা হয়েছে। তারা লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণ করে ফলাফল প্রকাশ করেছেন।
অনেক অযোগ্য ব্যক্তিদের অর্থ আদায়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে আব্দুস ছালাম বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। যারা নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করেছে তারাই মৌখিক পরীক্ষায় মনোনিত হয়েছে। ফল প্রকাশের পর যোগ্য ব্যক্তিদের মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে। সেখান থেকে ৫৫ জন শিক্ষক ও ৬ জন অফিস সহকারী পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জানান, মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডে উপস্থিত রয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে তখন তিনি কিছুই বলতে রাজি হয়নি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, অর্থ আদায়ের অভিযোগ পায়নি। পেলে আইডিয়াল স্কুলের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংলিশ ভার্ষণের অনুমোদন না থাকায় নিজেদের স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালন করতে পারবে। তবে অর্থ আদায় করে যদি কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয় তা অবৈধ্য নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে তা বাতিল করাও হতে পারে।
এমএইচএম/আরএস/এমএস