জাতীয়

রোহিঙ্গা সহায়তা : আগামী ১০ মাসে প্রয়োজন ৯৫০ মিলিয়ন ডলার

আগামী ১০ মাসে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন হবে ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এ অংক দাঁড়ায় সাত হাজার ৬০০ কোটি টাকা (৮০ টাকা ধরে)। কক্সবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয়দের ক্ষতিপূরণেও এ অর্থের প্রয়োজন হবে।

Advertisement

জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় একটি ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্লান’ হাতে নিয়েছে। সে অনুযায়ী এ অর্থ ব্যয় হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়েছিল।

জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্লান’ (মার্চ-ডিসেম্বর ২০১৮) এ সপ্তাহে জেনেভায় উপস্থাপন করা হবে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো সম্প্রতি এমনটি জানান।

Advertisement

‘এ সময় নতুন করে বিশাল অংকের এ তহবিল সংগ্রহের বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্লান’-এ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয়দের বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রথম এগিয়ে আসা স্থানীয়রা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। যে কারণে তাদেরও এখন সহায়তা প্রয়োজন।

কক্সবাজারে রেফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনের (আরআরআরসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজারের স্থানীয়দের জন্য অন্তত ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে কারণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ফলে সেখানে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, শ্রমের মূল্য কমে গেছে এবং স্থানীয়দের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে তারা এখন দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। এ কারণে তাদেরও জরুরিভিত্তিতে সহায়তা প্রয়োজন।

‘শরণার্থী ক্যাম্পের জন্য প্রায় ৫০০ একর জমির বনভূমিতে পরিষ্কার করা হয়েছে। গাছগুলো রোহিঙ্গাদের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে’ বলেন আরআরআরসি কমিশনার আবুল কালাম।

গেল বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় ছয় লাখ ৯১ হাজার ৩২০ রোহিঙ্গা (২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী)। এর আগে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ধরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪০ জন। আরআরআরসি প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থাসহ বিভিন্ন বেসরকারি দাতা সংস্থা প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন, শিক্ষা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করে আসছে।

এছাড়া কলেরা, ডিপথেরিয়া ও হামের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগের প্রাদুর্ভাব রক্ষায় রোহিঙ্গা শিশুদের টিকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এখনও থেমে থেমে রোহিঙ্গারা নিজ জন্মভূমি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের শূন্য রেখা বরাবর আশ্রয় নিয়ে আছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। স্থানীয়ভাবে তাদেরও মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

আরআরআরসি জানায়, ইতোমধ্যে তারা বন্যা ও ভূমিধসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করেছে। তাদের কুতুপালং-বালখালী ক্যাম্পের নতুন জায়গায় স্থানান্তরের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য প্রাথমিকভাবে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত আরও ১৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

আবুল কালাম বলেন, ‘প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই।’

ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, বর্ষার সময় বন্যা ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা আছে। এমন পরিস্থিতি থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য পাহাড়ের নিচু স্তর ও ঢালে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আরও মজবুত ও শক্তিশালীকরণ, ক্যাম্পের সড়কগুলোর উন্নয়ন প্রয়োজন।

‘সর্বোপরি, স্থানীয় ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে কোনো উত্তেজক পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়- সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন’- বলেন মিয়া সেপো।

এমএআর/বিএ/আরআইপি