১৭ মাসের শিশু ফাহাদ। ১৫ মাস ধরে ভুগছে অজানা অসুখে। ফাহাদের মাথা, মুখ, হাত, গলা, কান, বুক তথা পুরো শরীরজুড়ে কালোজিরার মতো গোটা উঠেছে। বিশেষ করে শরীরের নিচের অংশ তথা পা দুটো গোটায় ঢেকে গেছে।
Advertisement
দুই মাস বয়স থেকেই ফাহাদের এই অসুখ দেখা দেয়। আক্রান্ত রোগে প্রচণ্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা নিয়ে শিশু ফাহাদ বিছানায় চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। ফাহাদের অসুখে চিকিৎসকরা পারেননি কার্যকরী কোনো ওষুধ দিতে। কারণ চিকিৎসকরাও ফাহাদের রোগটি নির্ণয় করতে পারেননি। তারাও জানেন না এটি কী রোগ।
শিশু ফাহাদ টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামের শাহীন মিয়া ও মেরিনা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান। বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের কোদালিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
ফাহাদের বাবা শাহীন মিয়া জানান, ফাহাদের বয়স যখন দুই মাস তখন থেকেই তার শরীরে দেখা দেয় এই রোগ। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়ে কোনো উন্নতি হয়নি ফাহাদের।
Advertisement
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজ্জাত হোসেনের কাছে ৫ মাস, তারপর চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল ইসলামের কাছে ৬ মাস চিকিৎসা করাই। কিন্তু তারা কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারেননি।
তারপর টাঙ্গাইলের মধুপুর জলছত্র হাসপাতালে নেয়া হয় ফাহাদকে। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেলের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. জামাল উদ্দিনকে দেখিয়েছি। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানানো হয়, মাংসের ৩ সে.মি. নিচ থেকে কালোজিরার মতো দেখতে এই গোটাগুলো জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু উনারা এই রোগের কোনো নাম বলতে পারেননি। শুধু বলেছেন, এটা জন্মগত। সেখানে দুবার মেডিকেল বোর্ড বসিয়েও তারা জানতে পারেননি এই অসুখের নাম।
তিনি আরও বলেন, আমি অটোরিকশা চালক। খুবই অল্প আয়ের মানুষ। একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেছি। জমি বিক্রির ছয় লাখ টাকা ছেলের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছি। তবে কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই আমার। শিশু সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। জানি না শিশুটির ভাগ্যে কি আছে?
Advertisement
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও শিশু ফাহাদের চিকিৎসক ডা. খন্দকার সাদ্দাদ হোসেন বলেন, এটি ক্রনিক ননস্পেসিফিক ডার্মাটাইটিস টাইপের রোগ। উপসর্গ অনুযায়ী দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে হয়। তবে উন্নত পদ্ধতিতে বায়োপসি করালে হয়তো রোগটি চিহ্নিত হতে পারে। যা উন্নত দেশগুলোতে সম্ভব।
ফাহাদের মা মেরিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। কেউ আমার ফাহাদকে ভালো করতে পারেননি। তবে ফাহাদকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলেছেন। আমার স্বামী অটোচালক। আমাদের পক্ষে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই। একমাত্র সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমরা নিঃস্ব। ফাহাদের চিকিৎসা করাতে পারছি না। ফাহাদের চিকিৎসার জন্য সমাজের দয়ালু ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই আমরা।কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ফাহাদের বাবার ০১৭১৮-৮৮৭৮৬৩ নম্বরে।
আরিফ উর রহমান টগর/এএম/আরআইপি