জাতীয়

মিছিল থেকে যৌন হয়রানির ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে

আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সমাবেশে যাওয়ার পথে মিছিল থেকে কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে বাংলামোটরে যে ঘটনাটি ঘটার কথা ছড়িয়েছে ওিই ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর জবানবন্দী নিয়েছে পুলিশ, একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।

Advertisement

আর এ ধরনের ঘটনা রাজনীতি নিয়ে নারীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। কিন্তু আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন, এমন কেউ নারী নির্যাতনের এসব ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারেন না বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে তার চিন্তার কথা উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বিএনপির নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্য রয়েছে। তিনি বলছেন, আগে ভালো ছাত্ররা রাজনীতি করতো। এখন সেটা হয় না। রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো ভাল ছাত্র-ছাত্রীকে আরও রাজনীতি বিমুখ করবে।

৭ই মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি মিছিল থেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে- এমন অভিযোগ করে লেখা ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টির নিন্দা আসে।

Advertisement

এরপর বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলামোটরের ঘটনাটি নিয়ে যে স্ট্যাটাসটি দেয়া হয়েছিল সেখানে লেখা ছিল- ‘শান্তিনগর মোড়ে একঘণ্টা দাড়ায় থেকেও কোন বাস পাইলাম না। হেটে গেলাম বাংলামটর। বাংলামটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০জন আমাকে ঘিরে দাড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার তাকে তাই। কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউকেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেছে। আমার কলেজ ড্রেসের বোমাত ছিঁড়ে গেছে, ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইসে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই।’

এই স্ট্যাটাসটি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর ওই তরুণী স্ট্যাটাসটি ‘অনলি মি’ করে নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। পোস্টটা অনলি মি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দেইনি।’

এদিকে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর জবানবন্দী নিয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেয়েটির পোস্ট ভুয়া নয়। তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তার দেয়া বর্ণনা ও ঘটনার সময় অনুযায়ী শাহবাগ, শান্তিনগর, বাংলামটরসহ এর আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতনরা। তদন্ত চলছে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, গতকাল (বুধবার) রাতে একাধিক স্পটে যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেসব তরুণীরাও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। প্রযুক্তিগত তদন্তের পর আমরা ধারণা করছি, সরকারকে বিব্রত করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। কারণ বাংলামোটরের ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো একাউন্টের অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ ওঠার পর প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস-সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিংবা গল্পের কথা শোনা যাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা কতটুকু জানি না। হয়ত শিগগিরই তা উদঘাটিত হবে। উল্লিখিত ঘটনার আশপাশে সবখানেই সিসি-ক্যামেরা আছে। ঘটনা ঘটলে কারা কারা দায়ী এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী তা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু হবে না। না ঘটলেও হয়ত রটনার রহস্য উদঘাটিত হবে। উত্তেজিত হয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে অপেক্ষা করাই ভালো।’

এনএফ/এমএস