অতি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে চলতি আমন মৌসুমে এখনো বীজ (চারা) উৎপাদন করতে না পারায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগেরহাটের হাজারো কৃষক। প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়েই যেখানে আমন চাষের অর্ধেক কাজ সেরে ফেলেন কৃষকরা সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের অধিক কৃষক ঠিকমতো তাদের বীজতলা তৈরির কাজ শেষ করতে পারেননি। চাষযোগ্য জমিতে অধিক হারে পানি থাকায় এক প্রকার ঘরে বসে অলস সময় পার করতে বাধ্য হচ্ছেন।আমন বীজ উৎপাদন করতে না পারার এ চিত্র বাগেরহাট জেলার শরনখোলা, মোড়েলগঞ্জ,কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলার অসংখ্য গ্রামের কৃষকদের। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জেলার শরণখোলা উপজেলার কৃষকদের। এখানে প্রায় ১১ হাজার কৃষক রয়েছেন যারা এখনো কোনো বীজ ফেলতে পারেননি। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ অতি বর্ষণের কারণে শরনখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন জুড়ে পানি আটকে থাকায় আমন চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ছোট-বড় ২০টি জলকপাটগুলো (স্লুইজ গেট) থেকে সঠিকভাবে পানি না নামানোর ফলে এ পর্যন্ত কোনো বীজ উৎপাদন করতে পারেননি কৃষকরা। তাদের বীজ ধান ইতোমধ্যে ঘরে বসেই নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি বীজ তৈরির উদ্দেশ্যে মাঠে ফেলা ধান সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। উপজেলার কোথাও তেমন বীজ উৎপাদিত হয়নি। তবে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থার মধ্যেও কিছু কিছু এলাকায় আমন চাষাবাদের কাজ করছে কৃষকরা। তবে ভারী বর্ষণ না হওয়াসহ জমির পানি দ্রুত নেমে গেলে কৃষকদের এ সমস্যা থাকবে না বলে তারা আশা করছেন। সব থেকে বেশি সমস্যা গ্রস্থ শরনখোলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এবছর ১১ হাজের অধিক চাষি ইতোমধ্যে ১২,২৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের জন্য আমন চাষাবাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও চারা উৎপাদন করতে না পেরে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। উপজেলার খাদা এলাকার কৃষক রিপন তালুকদার, আ. হক তালুকদার ও ফারুক তালুকদারসহ অনেকে বলেন, চারা তৈরির জন্য এ পর্যন্ত কয়েক মণ বীজ ধান নষ্ট করলেও কোনো চারা উৎপাদিত হয়নি তাদের। চলতি বছর আদৌ আমন চাষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত তারা। চারঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ফুল মিয়া আকন ও আঃ কাদের আকন সহ অনেকে বলেন, মাঠে চারা তৈরির কাজ না করতে পেরে বসত বাড়ির আঙিনার সবজি ক্ষেত নষ্ট করে বীজ তলা তৈরি করলেও অনেকেই জমির অভাবে এখনো বীজ বুনতে পারেননি। অপরদিকে, কৃষকদের এ সংকটকে পুঁজি করে বীজ ধান বিক্রির ক্ষেত্রে ডিলার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে, ডিলারদের দাবি বীজ ধানের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী বেশি দামে বীজ ধান বিক্রি করে তাদের বদনাম করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে বীজধান বিক্রিতে কেউ অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।শওকত আলী বাবু/এমজেড/পিআর
Advertisement