স্বাস্থ্য

ঢামেকের গণশৌচাগার ব্যবহার অনুপযোগী : দুর্ভোগে রোগী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের গণশৌচাগারগুলোর (পাবলিক টয়লেট) অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী। কিছু কিছু ব্যবহার উপযোগী হলেও নেই প্রয়োজনীয় উপকরণ। তাই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের জন্য রোগীরা বাইরে থেকে কিনে আনছেন মগ, বালতি ও বদনা। এতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে রোগীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। সেই সঙ্গে ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি আর বিশ্রি দুর্গন্ধে নাক চেপেও শৌচাগারগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

Advertisement

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকলেও গণশৌচাগারগুলোর দিকে যেন সংশ্লিষ্টদের কোনো নজরদারি নেই। যতগুলো টয়লেট রয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশির দরজা ভাঙা, কিছুর দরজা বন্ধ হয়ে আছে আবার কিছু কিছুতে নেই মগ কিংবা বদনা। গোসলখানাগুলোতেও একই অবস্থা। নেই গোসলের জন্য কোনো বালতি ও মগ। এ কারণে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে নতুন মগ, বালতি এমনকি বদনাও কিনে আনছে। এতে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয় বলে জানান তারা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, হাসপাতালে গণশৌচাগারগুলো ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় রোগী তো দূরের কথা সুস্থ মানুষও অসুস্থ হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি, অন্তত রোগীদের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালের গণশৌচাগারগুলোর সমস্যা সমাধানে অচিরেই যেন স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঢামেকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ২ হাজার ৬০০ রোগীর ধারণ ক্ষমতানুযায়ী পাবলিক টয়লেট করা হয়েছিল প্রায় ৩০০টি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবায় সুনাম অর্জন করায় প্রতিনিয়ত রাজধানীসহ দেশের জেলা, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আসছে হাজার হাজার রোগী। এসব রোগীদের স্থায়ী চিকিৎসায় থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে। তাই ক্রমেই হাসপাতালে বাড়ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের পদচারণা। কিন্তু সেই চাহিদা অনুযায়ী বাড়েনি নতুন গণশৌচাগার।

পরিসংখ্যান বলছে, হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার রোগী ও তাদের স্বজনদের পদচারণা ঘটে। সেই সঙ্গে চিকিৎসক ও নার্সসহ (সেবিকা) বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। অথচ এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য যে পরিমাণ গণশৌচাগার রয়েছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণশৌচাগারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে মাত্র ২১২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আবার এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তালিকায় ২০ থেকে ৩০ জন বয়োবৃদ্ধ। ফলে ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি আর দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, ১১০ ও ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝে এক সঙ্গে রয়েছে পুরুষদের জন্য ১৬টি গণশৌচাগার। যার মধ্যে ১১টি শৌচাগারই ব্যবহার অনুপযোগী। এগুলোর মধ্যে ৫টি তালা মারা, তিনটির দরজা ভাঙা এবং ৩টি পয়োবর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। বাকি ৫টি ব্যবহার উপযোগী হলেও মগ, বালতি ও বদনা না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন রোগী ও স্বজনরা। একই অবস্থা পাশের ওয়ার্ডে অবস্থিত মহিলাদের গণশৌচাগারেও। সেখানে এক সঙ্গে রয়েছে ১২টি শৌচাগার। এর মধ্যে মাত্র ৩টি ছাড়া বাকি ৯টি ব্যবহার অনুপযোগী। এর মধ্যে ৪টিতে তালামারা, ৩টি পয়োবর্জ্যে ভরাট এবং ২টিতে নেই কোনো মগ ও বদনা।

ফলে প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় শৌচাগারগুলোতে পানি না ঢালার কারণে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ছিটানো হয় না নিয়মিত গন্ধরোধক পাউডার। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডের প্রতিটি শৌচাগারের একই অবস্থা। বার্ন ইউনিটের শৌচাগার কক্ষগুলোতেও ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাক চেপে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। একই অবস্থা ঢামেকের পুলিশ ক্যাম্পের শৌচাগারের। সেখানের একটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

ক্যাম্পের নিরাপত্তা বিভাগের একজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা এ সমস্যা এই পর্যন্ত তিনবার দেখে গেছে। কিন্তু কোনো সমাধান এখনও হয়নি। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ফয়েজউদ্দিন নামের এক রোগী জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। ছেলের পাশে থাকতে হয় রাতদিন। কিন্তু সারাদিনের মধ্যে বিরক্তকর একটা কাজ গোসল ও টয়লেট করা। কারণ গোসল ও টয়লেটখানার যে অবস্থা তাতে নাক টিপে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো রকমে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। কারণ আর কোনো উপায় নেই। এমন অবস্থায় টয়লেটগুলো ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি বলে জানান ওই ভুক্তভোগী।

অপর এক রোগী রাজিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, মহিলা টয়লেটগুলোর যে অবস্থা তাতে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যায় না তবুও ব্যবহার করছে সবাই। আমি এক সপ্তাহ ধরে এখানে আসছি। প্রত্যেক দিন পুরুষ টয়লেটে যাই। কি আর করব? উপায় নাই। ঢামেকের সহকারী পরিচালক (এ্যাডমিন) ডা. মো. সাইদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এমন সমস্যা সমাধানে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু আমরা চাইলেও তা মুহূর্তের মধ্য সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এই হাসপাতালের উন্নয়ন ও সংস্কার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিভিল বিভাগ দেখে। গণশৌচাগার সংস্কারের চাহিদাপত্র তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজ করছেন। এ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

Advertisement

ওআর/এমএস