ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে জাটকা নিধন বন্ধ না হলে কাঙ্খিত মাত্রায় ইলিশ উৎপাদন সম্ভব হবে না। শুধু ইলিশ রক্ষাই নয় এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি।
Advertisement
জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এর প্রমাণ পাওয়া গেল আবারো। বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়ন সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে একটি ট্রলার বোঝাই ১০০ মণ জাটকা জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড সদস্যরা। গত বুধবার ভোরে এ অভিযান চালানো হয়। মৎস্য বিভাগের সহায়তায় বরিশালের হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়ন সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মেহেন্দীগঞ্জ থেকে শরীয়তপুর যাওয়ার পথে একটি ট্রলারকে থামার নির্দেশ দিলে ট্রলারে থাকা মাঝিমাল্লা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ট্রলার থকে উদ্ধার করা হয় ১০০ মণ জাটকা। সকাল ১০টার দিকে জাটকা বোঝাই ট্রলারটি বরিশাল ডিসি ঘাটে এনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসেনের উপস্থিতিতে জব্দকৃত জাটকা এতিমখানা ও মাদরাসায় বিতরণ করা হয়।
ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ ও সম্পদই নয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে ইলিশের ওপর। অর্থনীতিতেও রয়েছে বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১৩ ভাগ (যার আনুমানিক অর্থমূল্য আট হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আসে ইলিশ মাছ থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় দুই শতাংশ। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। যদি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকে তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ব ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের ইলিশের বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে বাংলাদেশে।
সম্ভাবনার ইলিশকে তাই রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। যারা ইলিশের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তাদের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এমন ১৫টি জেলার ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২ জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এটা খুবই কার্যকর একটি পন্থা। ভবিষ্যতে এর আওতা আরো বাড়ানো যায় কিনা সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তবে জেলেদের দায়িত্ব হচ্ছে নগদ প্রাপ্তির লোভ ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জাটকা না ধরা। যদি সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে জাটকা ধরা হয় সেটি হবে আত্মঘাতী। জাতীয় স্বার্থে জাটকা না কেনাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
Advertisement
এইচআর/এমএস