সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমে গতি আনতে ১২ তলা ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ফলে মামলা পরিচালনা ও বিচারপতিদের সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা।
Advertisement
সরকারি অর্থায়ন থেকে এর পুরোটাই বহন করা হয়। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ এবং গণপূর্ত অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সভায় মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে সাত হাজার ৪৬৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
Advertisement
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এটি একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ও দুই ডিভিশনের বিচারপতির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে হাইকোর্ট ডিভিশনের নিম্ন আদালতে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মাটিতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এছাড়া বেশিরভাগ বিচারপতির নিজস্ব চেম্বার নেই। ফলে নিয়মিত এজলাস পরিচালনা ব্যহৃত হচ্ছে। এ সংকট মোকাবেলায় নতুন ১২ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় একটি ১২ তলা ভবন, দুই তলা সাব স্টেশন ভবন নির্মাণ, জেনারেট, এয়ারকুলার, বিদ্যুৎ সাব স্টেশনসহ আবসবাবপত্র কেনা হবে।
অন্যদিকে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সব জেলা-উপজেলায় বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
Advertisement
অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত থেকে যান। তারা বয়োজ্যেষ্ঠ এবং উপার্জনক্ষম না হওয়ায় ভাড়া খরিদ বা এককালীন অর্থ পরিশোধ করে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় তৈরি হবে বহুতল আবাসিক ভবন। ফলে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থানের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে দুই হাজার ২৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং নির্মাণ করা হবে আট হাজার ফ্ল্যাট। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৬৪টি এবং চার ইউনিট বিশিষ্ট ২৬৮টি অর্থাৎ মোট ৫৩২টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৯৮২ বর্গফুট। এতে ৩টি বেড, ১টি ড্রইং কাম ডাইনিং রুম, ২টি বাথরুমসহ বারান্দা থাকবে।
তবে যেসব জেলা বা উপজেলায় তিন বা ততোধিক ভবনের প্রয়োজন সেখানে আবাসন কমপ্লেক্স নির্মাণ করে অন্যান্য সুবিধাদি যেমন- অভ্যন্তরীণ সড়ক, লাইটিং ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। মূল খাস জমির উপর ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে। তবে যেসব উপজেলায় খাস জমি পাওয়া না যায় সখানে জমি অধিগ্রহণে করা হবে।
একনেকের আরেকটি প্রকল্প হলো স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষিতে, গ্রামীণ ও নগর অঞ্চলে জনগণের জীবন মানোন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হতে সুরক্ষার প্রয়োজনে মোট ৬৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন-লালবাগ-সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি)-(৩য় পর্যায়)’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প ।
প্রেস বিফ্রিংয়ের আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম প্রমুখ।
এমএ/এএইচ/পিআর