আন্তর্জাতিক

ঘর খুঁজছেন সদ্য সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার

পার্টি অফিসের এক চিলতে টেবিলের ওপর কফিনবন্দি খগেন্দ্র জমাতিয়ার দেহ। একটু পেছনে সিঁড়ির মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তিনি। ভেতরে ঢুকে প্রথমে প্রয়াত মন্ত্রীর দেহে মালা দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব। তার পরই এগিয়ে গিয়ে তার পা ছুঁলেন। আলগোছে হাতটা বিপ্লবের পিঠে রাখলেন মানিক সরকার।

Advertisement

পূর্বসূরির কাছে সম্ভাব্য উত্তরসূরির আশীর্বাদ নেয়ার উজ্জ্বল মুহূর্তটা তৈরি হয়ে গেল রোববার সকালেই। খগেন্দ্রবাবুর ছেলেকে কাছে টেনে সান্ত্বনা দিয়ে ফিরে গেলেন বিপ্লব। আর সকলকে নমস্কার জানিয়ে দ্রুত পায়ে মানিক উঠে গেলেন উপরে। ইস্তফা দিতে রাজভবন যাবেন বলে।

বাইরে কেউ টেরও পেল না, ইস্তফা দেয়ার পরে বাড়ি ফিরেই জিনিসপত্র গোছোতে শুরু করেছেন সস্ত্রীক মানিক। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর আসনই নয়, আপাতত মাথার উপরে ছাদও তো হারিয়েছেন তিনি! কোন কালে মায়ের নামে বাড়ি ছিল, সে সব পার্টির কাজে দান করেছেন ত্রিপুরার সদ্য সাবেক হওয়া মুখ্যমন্ত্রী মানিক। স্ত্রী পাঞ্চালীর বাবার বাড়ির সূত্রে জমি আছে। তবে সেখানে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ধনপুরের জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিধায়ক আবাসেও ঘর চাইবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন। তা হলে যাবেন কোথায়?

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ বলেন, ‘যত দিন না কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে, পার্টি অফিসের উপরের ঘর আছে। কী-ই বা আছে ওদের দু’জনের? কিছু বই আর সিডি শুধু!’

Advertisement

বিজেপির এক কার্যকর্তা দু’দিন আগেই অবশ্য দাবি করেছিলেন, মানিকের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আছে! সেই টাকায় বাড়ি ভাড়া হয়ে যাবে নিশ্চয়ই? হাসি ছাড়া আর কোনও জবাব দিতে পারেননি গৌতমবাবু।

থাকার ঠিকানা ঠিক না হলেও এটুকু স্পষ্ট যে, নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে বাংলার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো প্রায় সন্ন্যাসের পথে যাচ্ছেন না ত্রিপুরার মানিক। একে তো নিজে জিতেছেন। এ বার বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব তাঁকেই দেয়া হবে, নাকি বাদল চৌধুরীর মতো বর্ষীয়ান অন্য কেউ- সোমবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে সেই প্রশ্ন উঠবে। ক্ষমতা হারালেও ৪৫% ভোট পাওয়া যে নেহাত খারাপ নয়, সেই অঙ্ক সামনে রেখেই বিরোধী আসনে বসার প্রস্তুতি চলছে সিপিএমে।

মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বিপ্লবও বিরোধী বামদের সহযোগিতা চেয়েছেন। বলেছেন, ‘সুস্থ গণতন্ত্রে ভাল বিরোধীর প্রয়োজন। আর তিনি চার বারের মুখ্যমন্ত্রী। ওর অভিজ্ঞতার মূল্য আছে।’

রাজ্যপাল তথাগত রায় প্রথা মেনেই নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মানিককে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। মানিকও রাজভবনে বলেছেন, ‘এতগুলো বছর সরকার চালাতে সাধারণ মানুষ, সরকারি কর্মী, পুলিশ, সংবাদমাধ্যম- সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। সকলে ভাল থাকবেন!’

Advertisement

পদত্যাগপত্র নেয়ার পরে রাজ্যপাল এগোচ্ছিলেন বিদায় জানাতে। মানিক তাকে বলেন, সাধারণ নাগরিকের জন্য এতটা করার দরকার নেই। তথাগত অবশ্য সঙ্গেই বেরিয়েছিলেন। তার যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রিত্ব না-ই থাকুক। একটা দিন মানিক সরকারকে এগিয়ে দিয়ে আসতে নেই? আনন্দবাজার।

এসআইএস/জেআইএম