আইন-আদালত

তিন দলের ৩ সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ চূড়ান্ত

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গজানাইপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ মিয়াসহ (৬৬) তিন দলের তিন সমর্থকদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিস্থ তদন্ত সংস্থার কাযালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

মামলার অন্য দুই আসামি মো. জামাল উদ্দিন আহম্মদ ওরফে মো. জামাল উদ্দিন (৬৫) বিএনপির সমর্থক ও শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ (৭০) জামায়াতের সমর্থক বলে জানিয়েছেন সংস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শেষ করা হয় ২০১৮ সালের ৮ মার্চ।

Advertisement

দুই বছরের তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নিযাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ রয়েছে।

তদন্তে ১৭ জনকে হত্যা, ৬ নারীকে ধর্ষণ, ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩০ জনকে অপহরণ-নিযাতনের অভিযোগ রয়েছে। তিন হাজার ৫২০ আসামির বিরুদ্ধে সংস্থার নিবন্ধিত ৬৬৫টি মামলা রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান।

তদন্ত সংস্থার ৫৯তম তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. নুর হোসেন বলেন, মোট তিনশ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি তিনটি ভলিউমে সন্নিবেশন করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলার মোট সাক্ষি ২৩ জন। আট ধরনের অপরাধে তদন্ত সংস্থা আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

অভিযোগ সমূহ :

অভিযোগ-১ : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা ১টা পর‌্যন্ত আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো, জামাল উদ্দিন আহম্মেদ ২০/২৫ জন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জ থানার মামদপুর হিন্দুপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিন বাবু রায়কে হত্যা করে। এদিন আসামিরা গৌরী রাণীসহ মোট দশজনকে আটক ও অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। এদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী চারজনকে হত্যা করে। এ সময় দুই নারীকে পাকিস্তানি আর্মিরা ধর্ষণ করে। রাজাকাররা লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ-২ : ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ভোর ৫টায় আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের কান্দিরগাও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দরছ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তারা দরছ মিয়ার বসতঘর পুড়িয়ে দেয়।

অভিযোগ-৩ : ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে নবীগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে হিন্দুপাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিরাই নমশুদ্রসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তিনজনকে অপহরণ করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে।

অভিযোগ-৪ : ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে আসামি শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের বনগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে জহুর উদ্দিন, জনূ উল্লাহ ও দেওয়ান মামুন চৌধুরীকে অপহরণ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। পরে অর্থের বিনিময়ে জহুর উদ্দিন ও দেওয়ান মামুন চৌধুরী মুক্তি পেলেও জনূ উল্লাহকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযানের সময় জহুর উদ্দিনের মা ও এক বোন পাকিস্তানি আর্মিদের ধর্ষণের শিকার হন।

অভিযোগ-৫ : ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের লোগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে ধর্ষণ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।

এফএইচ/এমবিআর/জেআইএম