জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে আগামী রোববার আদেশের দিন ঠিক করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপন (ম্যানশন) করা হয়েছে।
Advertisement
এরপর ওই আদালত এ বিষয়টি রোববারের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রাখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন খালেদার আইনজীবীদের। তবে, সে দিন জামিনের বিষয়ে না কি নথির বিষয়ে আদেশ দেবেন তা নিশ্চিত করেননি। পরে বিষয়টি জাগো নিউজেক নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আপিল এবং জামিন আবেদন অনুযায়ী নথি তলব করার পর ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। সেই হিসেবে আদালত আগামী ১১ মার্চ রোববার জামিনের আদেশ দিতে পারেন। তাই আদালতের কাছে জামিনের আদেশ দেয়ার প্রার্থনা করছি। পরে আদালত মামলাটি রোববারের তালিকায় রাখবেন বলেছেন।
এ সময় আদালতে খালেদার পক্ষে বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, এহসানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষে আজ অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন না।
Advertisement
এর আগে, গত ২৫ জানুয়ারি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নথি আসার পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানান। এখনও বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়নি। জানা গেছে, নিম্ন আদালতের নথি রোববার নাগাদ হাইকোর্টে আসতে পারে।
বিচারিক আদালতের রায়ে ৫ বছরের সাজা দিয়ে দণ্ড ঘোষণার পর সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন চাওয়া হয় জামিন আবেদনে।
শুনানিতে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ওই দিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন।
২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী অংশ নেন।
Advertisement
২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। পাশাপাশি স্থগিত করেন তার অর্থদণ্ড।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। খালেদার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
এর আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল (আপিল নম্বর ১৬৭৬/২০১৮) করেন। আপিলের ফাইলিং আইনজীবী আবদুর রেজাক খান। ৪৪টি যুক্তি তুলে ধরে এ আপিল করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার ১১দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পান। অন্যদিকে, তার পরের দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরার জন্য আবেদন করা হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিয়ের সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এফএইচ/এনএফ/আরআইপি