ক্যাম্পাস

নারীদের মানুষ হিসেবে দেখতে চাই: অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম

 

আজ ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। নারী-পুরুষ সকলের জন্য এক বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস। আর এ দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববদ্যিালয়ের দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

Advertisement

নারী দিবসে বাংলাদেশের নারীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ কী?

বাংলাদেশের নারীরা সামগ্রিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। সরকার নারীদের অগ্রযাত্রার পথকে সুগম করতে নানা রকম সুবিধা দিচ্ছে। পূর্বের যেকোনো সময় থেকে এখন বাংলাদেশের নারীরা অনেক এগিয়ে। তারা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে এবং সফলতার সঙ্গে কাজ করছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীদের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

Advertisement

শ্রমিক শ্রেণির নারী, গ্রামের সাধারণ নারী যারা কৃষি কাজের সঙ্গে আছে এবং অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজের সঙ্গে আছে তারাও ক্ষমতায়ণ প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে। রাষ্ট্র, এনজিও এবং অন্যান্য সংস্থা নারীদের জন্য কাজ করছে। গ্রাম এবং অন্যান্য সব জায়গায় তারা কাজ করছে। ক্ষমতায়ন ঘটছে ঠিকই তবে উচ্চশ্রেণি অর্থাৎ শিক্ষিত শ্রেণির কথা যদি বিবেচনা করা হয় সেখানে ক্ষমতায়নের সুযোগ অনেক বেড়েছে। ক্ষমতায়ন একটি প্রক্রিয়া, এটা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে প্রকাশ করতে পারার যোগ্যতা। এটি ঘটে তখনই, যখন প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার তাকে সে সুযোগগুলো দেয়। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, তাদের হলে সিট বাড়ানো হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে তারা একটা জায়গা করে নিতে পেরেছে।

বাংলাদেশের সমাজে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

বাংলাদেশের সমাজে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ অর্থাৎ প্রশাসনিক, গবেষণা, প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতি ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ দেখে বোঝা যায়। নারীরা ক্ষমতায় প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছে। কিন্তু সাধারণ নারীদের অবস্থান উন্নয়নে আরো বেশি কাজ করতে হবে। সাধারণ নারীদের স্বপ্ন ও তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে ভাবতে হবে।

নারী দিবসের আপনার চাওয়া?

Advertisement

আমি নারীদের মানুষ হিসেবে দেখতে চাই।

বাংলাদেশে কি নারীদের যথার্থ মূল্যায়ণ করা হচ্ছে?

বাংলাদেশের নারীরা এখন যথার্থভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে। আগে সরকার প্রশাসনে নারীদের জন্য কোটা রাখত এখন কিন্তু কোটার প্রয়োজন নেই। এখন সবজায়গায় তারা প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাচ্ছে। তাদেরকে কোনো জায়গা থেকেই নারী বলে বাদ দিয়ে দিচ্ছে না। এখন তিন বাহিনীতেই নারীরা অংশগ্রহণ করছে। তারা অন্য পুরুষদের মতো যথার্থভাবে মূল্যায়িতও হচ্ছে।

নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

সবার আগে দরকার নিজের চিন্তা করার ক্ষমতা। আমি যে একটা কিছু চাইব সেক্ষেত্রে আমার খোঁজ রাখতে হবে যে সেটা আমার পাওয়ার সুযোগ আছে কিনা। যেমন আমি ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, আমার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে একটা সিট থাকতে পারে। আমি কি জানি সেট? এটা হলো এই বিষয়ে তথ্যটা রাখা।

আরেকটা হলো, আমার অধিকার কী? রাষ্ট্র আমাকে কী কী অধিকার দিয়েছে। রাষ্ট্র আমাকে বাবার সম্পত্তির ভাইয়ের অর্ধেক অধিকার দিয়েছে এরপর দেখতে হবে সমাজ আমাকে কী অধিকার দিয়েছে, ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তি ভাই আমাকে দিচ্ছে কি না, মা আমাকে সাপোর্ট করছে কি না, বোন আমাকে ধরে রাখছে কি না এসব।

আমি মনে করি মেয়েদের এসব বিষয়ে সচেতনতা দরকার। মেয়েরা একা যেসব কাজ করতে পারে না দশজনে মিলে ভালোভাবে করতে পারে। এজন্য নারীর সঙ্গে নারীর একটা সংহতি দরকার, দলগঠন দরকার, ছেলেরা ক্লাব করে তারা সেখান থেকে খবর পায়। কিন্তু মেয়েরা কিন্তু তা করছে না।

আমাদের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত নারীরা নারী আন্দোলন করছেন। কিন্তু সাধারণ নারীদের মূল যে প্রয়োজন তাদের যে স্বপ্ন আমরা সেটা নিয়ে ভাবছি না। সেজন্য আমরা আশা পূরণের দিক থেকে পিছিয়ে আছি।

হাফিজুর রহমান/এফএ/আরআইপি