আন্তর্জাতিক

বিয়ে আটকে একঘরে, নতুন যুদ্ধে বিলকিস

মেয়েটির সহায় ছিল না, সম্বল ছিল না, কিন্তু সাহস ছিল তুমুল। তাই রুখে দাঁড়িয়েছিল পরিবারের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এই ধৃষ্টতা দেখানোয় পরিবার তাকে ছুঁড়ে ফেলেছিল। কিন্তু কিছু অনাত্মীয় পণ করে ফেলেছিলেন, একা মেয়েটাকে হারতে দেওয়া যাবে না। তারা এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে। তাদের সহায়তায় সেই কিশোরী আবার শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

রোগা, লম্বা সতেরো বছর বয়সী মেয়েটির নাম বিলকিস খাতুন। ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর সমুদ্রপুরের মেনা সরজিনী পাহাড় হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির আপাত লাজুক ছাত্রী সে। তার মতে, অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া অপরাধ। সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার বাড়ির লোকেরা যদি আমাকে ত্যাজ্য করে তা হলে সেই অবস্থার সামনে দাঁড়াতে আমি প্রস্তুত।

বছর দেড়েক আগে নিজের বিয়ে রুখে দিয়েছিল এই কিশোরী। তখন সে সদ্য মাধ্যমিক পাশ করেছে। পর পর তিন বোন। হতদরিদ্র বাবা ফারুখ আহমেদ আর মা তাইরিমা বিবি। বড় মেয়ে বিলকিসকে দিয়ে দিয়েছিলেন মামাবাড়িতে।

মামার পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে বেঁকে বসে বিলকিস। স্কুলে খবর দেয়। বিডিও অফিস থেকে লোক এসে বিয়ে বন্ধ করে। গরিবের মেয়ের এমন সাহস আর গর্হিত অপরাধে পরিবারের সদস্যরা এমনকী, নিজের বাবা-মাও তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে একঘরে করে দেয় তাকে।

Advertisement

খাবার, টাকাপয়সাও দেয় না। তবু বিলকিসকে দমানো যায়নি, ভয় দেখানো যায়নি। বিলকিসকে সমর্থন করায় তার দাদীর ওপর থেকেও সব দায় দায়িত্ব তুলে নেয় পরিবারের বাকি সদস্যরা। একই ভিটায় আলাদা ঘরে শয্যাশায়ী দাদীকে সঙ্গে নিয়ে নতুন যুদ্ধ শুরু করে বিলকিস। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেলাই মেশিনে কাপড় তৈরি করে বিক্রি করে নিজের আর দাদীর খরচ চালাচ্ছে সে। শিক্ষকরা তার এই যুদ্ধের কথা শুনে টিউশনের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। আর বিডিও অফিসে কথা বলে চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।

জেলার সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আজকাল হামেশাই বিভিন্ন জেলা থেকে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে আটকানোর খবর আসে। কিন্তু এর মধ্যে সত্যি কতজনের বিয়ে কতদিন পর্যন্ত আটকে রাখা যায় তার একটা সমীক্ষা হওয়া উচিত। কেন না অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিশোরীর উপর পরিবার থেকে শাসন চলে এবং মেয়েরা শেষ পর্যন্ত পরিবারের কথা শুনতেই বাধ্য হয়। বিলকিস পুলিশ হতে চায়। তার মত সাহসী মেয়েরাই নিজেদের জীবন গড়তে পারে অনায়াসে।

টিটিএন/আরআইপি

Advertisement