ফেসবুকসহ বার্তা আদান-প্রদানের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করেছে শ্রীলঙ্কা। সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর হামলা ও সহিংসতা ঠেকানোর লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বুধবার দেশটির সরকার জানিয়েছে।
Advertisement
বৌদ্ধ ও মুসিলমদের সংঘাতের পর মঙ্গলবার দেশটিতে সাতদিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত কয়েক বছরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা।
একই সঙ্গে বৌদ্ধদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন ধ্বংসেরও অভিযোগ আনা হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। এছাড়া কিছু সংখ্যক উগ্রপন্থী বৌদ্ধ শ্রীলঙ্কায় মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় প্রার্থীর উপস্থিতির প্রতিবাদ করছে। মিয়ানমারেও কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে রোববার ক্যান্ডি জেলায় মুসলিমদের সঙ্গে বৌদ্ধদের সংঘর্ষে এক বৌদ্ধ যুবকের প্রাণহানি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যান্ডিতে কারফিউ জারি করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও অস্থিরতা তৈরি হয়।
Advertisement
স্থানীয়রা বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা দেশটিতে সাতদিনের জরুরি অবস্থা জারি করলেও রাতভর মুসলিমদের মসজিদ ও দোকান-পাটে হামলা চালিয়েছে উত্তেজিত বৌদ্ধরা।
পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা বলেন, মঙ্গলবার রাতে ক্যান্ডিতে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। চা চাষের জন্য বিখ্যাত এই জেলা।
তিনি বলেন, পুলিশ অন্তত সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশের তিন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কা সরকার বলছে, মুসলিমদের ওপর আরো হামলা চালাতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দেয়া হয়। এর জেরে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
Advertisement
বুধবার সরকার জানায়, দেশজুড়ে আগামী তিনদিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ থাকবে।
শ্রীলঙ্কায় বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল বিদ্রোহীদের ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ২০০৯ সালে ঘটলেও দেশটি এখনো এর ক্ষত সারিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। গৃহযুদ্ধের সময় তামিল জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
২ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় মুসলিম রয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৭০ ও হিন্দু ধর্মের অনুসারী আছে ১৩ শতাংশ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন।
এদিকে, প্যাগোডার শহর হিসেবে বিখ্যাত ক্যান্ডিতে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
বাইরে লোকজন এসে ক্যান্ডিতে সহিংসতায় ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শ্রীলঙ্কার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী সারাথ আমুনুগামা। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র আছে।’
সূত্র : রয়টার্স।
এসআইএস/এমএস