মতামত

পাটের সুদিন ফিরুক

সকলকে পাটপণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাট দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাট পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকলের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী। সবাইকে এই আহ্বানে সাড়া দিতে হবে।

Advertisement

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার একটি বড় সম্পদ। এটা ব্যবহার করে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। এ ছাড়া এসব পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। তিনি বলেন, পাট নিয়ে গবেষণার ফলে অনেক নতুন নতুন অকর্ষণীয় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানিরা আমাদের পাট বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করতো। তারা পাটকে ধ্বংস করার জন্য কৃষকদের বঞ্চিত করতো। তাদেরই প্রেতাত্মারা যারা বাংলাদেশে আছে তারাও ক্ষমতায় গিয়ে রাজাকার নিজামীকে শিল্পমন্ত্রী-কৃষিমন্ত্রী বানিয়ে আরেক দফা এই পাটকে ধ্বংস করেছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর পাটকে এবং পাট চাষীদের বাঁচানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যেগ গ্রহণ করি।

বাংলাদেশকে এক সময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হত। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসতো পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। কিন্তু কালের চক্রে পাটের সেই সোনালি দিন আর নেই। মাঝখানে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার এক চেষ্টা হয়েছিল। বিশেষ করে সরকার বন্ধ পাটকল চালুসহ নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছিল পাটখাতের উন্নয়নে। কিন্তু সেটিও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আবারও শুরু হয়েছে পাটখাতের দুর্দিন। ফলে পাট চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এবং পাটজাত পণ্যের সঙ্গে যেসব মানুষজন জড়িত তারাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আবারও উদ্যোগী হতে হবে। দেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে ঐতিহ্যময় গৌরব।

Advertisement

সরকার পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করেছে। পাট উৎপাদন বিপণন ও রফতানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানেও দেয়া হবে। এছাড়া পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইনও ( ২০১০) করা হয়েছে ইতোমধ্যে। পাটখাতের মাধ্যমে এখনো বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই পাটকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে কৃষি অর্থনীতির ওপর ভর করেই দাঁড়াতে হবে। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বেড়ে উঠতে হলে নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

পাট এমন একটি ফসল যার সবকিছুই কাজে লাগে। পাটের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। ঔষধি পথ্য হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। পাটখড়ি উৎকৃষ্ট জ্বালানি। ঘরের বেড়া বা আসবাবপত্র তৈরিতেও পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়। আর পাটের আঁশের কথা তো বলাই বাহুল্য। উন্নত জাতের তোষা পাটের সুতা থেকে জামদানি পর্যন্ত তৈরি সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এছাড়া পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। এরফলে পাট বলতে এখন বাংলাদেশকেই বুঝাবে। মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করা গেলে এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তবে এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

এছাড়া বন্ধ হওয়া পাটকল চালু করা, যেগুলো চালু আছে সেগুলো যেন ঠিক মত চলে সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি। পাট উৎপাদনে কৃষি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় পাটের নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উন্মেষ ঘটাতে হবে দেশপ্রেমের। পাটের সুদিন ফিরে আসলে এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ তাতে উপকৃত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে যুগোপযোগী এবং বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন- আমাদের প্রত্যাশা এমনটিই।

এইচআর/পিআর

Advertisement