বিশেষ প্রতিবেদন

সাদা প্যানেল ঘোষণা হলেও চূড়ান্ত হয়নি নীল

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সেশনের নির্বাচনের জন্য সরকার সমর্থকদের সাদা প্যানেল চূড়ান্ত করে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার রাতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনে এক সভায় সরকার সমর্থক আওয়ামী সমন্বয় পরিষদের এই প্যানেল চূড়ান্ত হয়। অন্যদিকে সোমবার বিরোধী বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্যের (নীল প্যানেল) বৈঠক হলেও প্রার্থীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির কনফারেন্স কক্ষে বিএনপির সমর্থিত জাতীতাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র আইনজীবীরা এ বৈঠকে অংশ নেন।  

Advertisement

জানা গেছে, বৈঠকের বিষয় কারাবন্দী দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত দলের দ্বায়িত্বরত তারেক রহমানকেও জানানো হতে পারে। ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৃতীয় তলার কনফারেন্স কক্ষে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে জাতীতাবাদী আইনজীবী ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে যে সকল আইনজীবী বিএনপির ফোরাম থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের কাছে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সভাপতি পদে ১০ হাজার এবং সম্পাদক পদে আট হাজার টাকা দিয়ে মনোনয়নপত্র কিনতে হবে। তারপর বৈঠকে আলোচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হবে। এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সেক্রেটারি এবং সমিতির সাবেক সম্পাদক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল জাগো নিউজকে জানান, আমরা সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। বৈঠকে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে পারিনি। তবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) আবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকের পর বলা যাবে কাদের চূড়ান্ত প্রার্থী করা হচ্ছে। তিনি জানান, সোমবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, শাহজাহান ওমর, বদরোদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, মীর নাসির, আমিনুল হক, সাইদুর রহমান, নিতাই রায় চৌধুরী, তৈমুর আলম খন্দকার প্রমুখ। তবে বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়াকে জানানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, এই নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ থেকেই এর আগে তিনি প্রতি বছরই প্রার্থীদের খোঁজখবর নিতেন। তবে প্রতি বছরের মতো এবার এ সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া জেলে থাকায় তার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কথা বলার সুযোগ কম। একদিনের বৈঠকে সরকার সমর্থিত আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন তারা। আপনারা পর পর দুই দিন বৈঠক করার পরেও প্রার্থী ঠিক করতে পারেননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল জাগো নিউজকে বলেন, রোববার প্রথম বৈঠক নয়, সেটা ছিল সোমবারের বৈঠকের প্রস্তুতি সভা। যদিও অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেছেন, রোববার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য দ্বিতীয় বৈঠক ছিল। 

রোববার রাতে সরকার সমর্থিত আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে সভাপতি এবং শেখ মোহাম্মদ মোরশেদকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ সেশনের নির্বাচনের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, আব্দুল্লাহ আবু প্রমুখ। পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় উপস্থিত আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান।

Advertisement

সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোর মনোনীতরা হলেন, সহ-সভাপতি আলালউদ্দীন ও ড. মোহাম্মদ শামসুর রহমান, ট্রেজারার ড. মোহাম্মদ ইকবাল করিম, সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও ইয়াদিয়া জামান, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, হুমায়ুন কবির, চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, শাহানা পারভীন, রুহুল আমিন তুহিন, শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া, মোহাম্মদ মুজিবর রহমান সম্রাট। ২০১৭-১৮ সেশনের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদে জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল)। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) পেয়েছিল ৬টি পদ।প্রসঙ্গত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) ২০১৮-২০১৯ সেশনের নির্বাচন আগামী ২১ ও ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১ মার্চ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৫ মার্চ থেকে আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহ, দাখিল, একই দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় বাছাই এবং ১৪ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। 

সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট (আবু ইউসা) এ ওয়াই মসিউজ্জামানকে প্রধান সমন্বয়ক করে নির্বাচনের জন্য সাত সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শামীমা সুলতানা দিপ্তী, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মোখরেসুর রহমান (জিহাদ), মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইলিয়াস ভূইয়া (এম ই ইলিয়াস কচি) ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।

এফএইচ/ওআর/জেআইএম

Advertisement