নিয়মিত পরিষ্কার না করায় রাজধানীর নিচু জমি, ঝিল ও লেকগুলো হয়ে উঠেছে আবর্জনার ভাগাড়। ড্রেন ও খালগুলোতে হচ্ছে মশার প্রজনন। এসব প্রজনন স্থলে মশা নিধনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাবাসীর।
Advertisement
এসব জলাশয়, খাল ও নিষ্কাশন নালা মশার আদর্শ প্রজননস্থল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মশা নিধনে এসব প্রজনন স্থলে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। ফলে মশার উপদ্রব বাড়ছেই। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে এলাকাভিত্তিক প্রতিদিনই ওষুধ ছেটানো হলেও কমছে না মশা।
রাজধানীর মিরপুর পাইকপারি (বউবাজার) এলাকার খালের পাশেই নিজস্ব বাসা সাইদুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘একদম খালের পাশেই আমার বাসা। এ খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। এখন এখানে জমে থাকা ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানিতেই মশা বংশ বিস্তার করে কিন্তু এমন জায়গায় মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয় না। ফলে এলাকার ওয়ার্ডগুলোতে মশা নিধন কর্মীরা ওষুধ ছিটিয়ে গেলেও মশার উৎপাত কমছে না।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কালসী, ভাষানটেক, কল্যাণপুর, দারুসসালাম, নাখালপাড়া, মহাখালী, বাসাবো, খিলগাঁও, মুগদা, মানিকনগরসহ আরও কিছু এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় মশার উপদ্রব ব্যাপক। স্থানীয়রা জানান, মশার প্রজনন স্থল খাল, ডোবা-নালাতে ওষুধ ছিটানো হয় না। তাই মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের ঝিল কচুরিপানায় ভর্তি। এসব কচুরিপানা ভর্তি ডোবা-নালা মশার প্রজনন ক্ষেত্র। এদিকে ঢাকার খালগুলোর অনেক জায়গায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব স্থানেও মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য খোলা ও ভাঙাচোরা নর্দমাগুলোর জন্যও বাড়ছে মশার বংশবৃদ্ধি। কিন্তু এসব মশার প্রজনন স্থলে ঠিকমতো মশা মারার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না।
Advertisement
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি অঞ্চল-৪, মিরপুর) নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাহ সিংহ বলেন, মশা নিধনে ডিএনসিসি ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে। বর্তমানে মশা নিধনের জন্য জনবল, ওষুধ, মেশিনসহ কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আমরা শুধু পর্যবেক্ষণ করি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ভোরের দিকে ডোবা খালগুলোতে মশা মারার ওষুধ দেয়া হয়, যে কারণে অনেকেই দেখতে বা জানতে পারেন না।
তিনি বলেন, এসব খাল ও ডোবা নালায় অবশ্য খুব বেশি ওষুধ দেয়া হয় না, কারণ এসব জলাশয় পরিষ্কারের জন্য কর্পোরেশনের আলাদা বাজেট নেই। তাছাড়া এগুলো পরিষ্কারের দায়িত্বও বিভিন্ন সংস্থার তাই আমরা এককভাবে ইচ্ছে করলেও তা করতে পারি না। এসব পরিষ্কারের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৮ জন লোক প্রায় ৪০ লিটার ওষুধ ছিটায়। ভোর বেলায় এসব ডোবা, নালা ও খালগুলোতে ওষুধ ছিটানো হয় আর অন্য সময় পুরো এলাকায় মশার ওষুধ দেয়া হয়। তবে সব খাল ও ডোবা নালায় ওষুধ ছিটানো সম্ভব হয় না। কারণ পর্যাপ্ত বাজেট নেই। প্রতিদিনই এলাকায় ওষুধ ছিটানো হয় কিন্ত কার্যত ফলাফল পাচ্ছি না।
এদিকে রাজধানীর অনেক ডোবা কচুরিপানায় ভর্তি। কচুরিপানার ফাঁকে পানিতে ভাসছে মশা। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলাশয়গুলোর মালিক। এসব জলাশয় পরিষ্কারের জন্য কর্পোরেশন এককভাবে কিছু করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
এএস/ওআর/আরআইপি