জাতীয়

ভিআইপিদেরও ঘুম কেড়ে নিচ্ছে মশা

মগবাজার, ইস্কাটন, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা ও মিন্টু রোড। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি। দেশের বরেণ্য মন্ত্রী, সচিব, সিনিয়র সচিব ও উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি বাসভবন এখানে। অনেকে আবার মন্ত্রীপাড়া নামেও চেনেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতর ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ও এ এলাকায়। তবে ভিআইপি এখানকার বাসিন্দাদেরও স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না মশা। গত ১২-১৫ দিনের মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

Advertisement

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই অসহনীয় মশার উপদ্রব। প্রতিদিন সকাল থেকেই কমবেশি মশার উপদ্রব থাকে। তবে বিকেলের পর থেকে জানালা খুললে রাতে আর ঘরে থাকা যায় না। উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও দুই সিটি কর্পোরেশন এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালের নুসরাত জাহান নামের এক রোগী জাগো নিউজকে বলেন, আমি কেবিনে ৯ দিন ধরে আছি। ৪-৫ দিন আগে মশার ওষুধ ছেটানোর শব্দ শুনেছিলাম। ২-৩ দিন ধরে পাচ্ছি না। রাতে প্রচুর মশা দেখা যায়। নার্সরা প্রতি রাতে অ্যারোসল দিয়ে গেলেও সাময়িকভাবে মশা চলে গেলেও সারা রাত তাদের উপদ্রব থাকে। ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মর্যাদার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, সদর দফতরের ভেতরে খুব কমই মশার ওষুধ ছেটানো হয়। আমরা নিজ উদ্যোগে দুপুরের পর থেকে কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। তারপরও কোনোভাবেই উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, মশার ওষুধ ছিটানো হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পছন্দের এলাকায়। কোথাও কোথাও ২-১ মাসেও একবার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না, আবার কোথাও মাসে দুই-তিনবারও ওষুধ ছিটানো হয়। এ বিষয়ে ইস্কাটন মগবাজার এলাকার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোক্তার সরদার জাগো নিউজকে বলেন, মশার উপদ্রবের কারণে আগে সিটি কর্পোরেশন থেকে যে ওষুধটি দেয়া হচ্ছিল সেটিতে মশা কমেনি। তাই নতুন একটি ওষুধ (টেলফোস নামক লার্বি সাইডিং) ২-১ দিনের মধ্যে হাতে পাবো। আশা করছি, নতুন ওষুধে মশার উপদ্রব কমবে। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫-৬ জন কর্মী নিযুক্ত আছেন। তাদের দিনে ২ বার ওষুধ ছিটানোর কথা। তবে মগবাজার, মালিবাগ, রমনা এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, ২-৩ দিন পর পর একজনকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়। এছাড়া কোনো তৎপরতা নাই। সরেজমিন দেখা যায়, মগবাজার, মালিবাগ এলাকায় বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পরে থাকা ময়লা আবর্জনার কারণে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। বিশেষ করে দিলোরোডের গলির মাথায় বাংলামোটর থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়গামী ফ্লাইওভারটির নিচে প্রতিদিনই বাজার বসছে। মাছের আঁশ ও বরফগলা পানির কারণে প্রতিদিনই নোংরা থাকে স্থানটি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোক্তার সরদার এ বিষয়ে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি একটি সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে এলাকার সীমানার ভেতরের ডোবা, নালা ভরাট এবং সেগুলোতে ওষুধ ছিটানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও যারা ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন তাদের মধ্যে অনেকে বয়স্ক রয়েছেন। তাদের বদলে তরুণদের নিয়োগ করে ওষুধ ছিটানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মশা নিধন সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মশা নিধনের জন্য আমাদের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছে। আমরা মশা নিধনের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। এছাড়া কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মশা নিধনের ওষুধ-মেশিন সরবরাহ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। একই সঙ্গে মশক নিধনবিষয়ক পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আশা করি মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হবে। এআর/জেএইচ/এমএস