খেলাধুলা

অনেক বলে কয়ে খেলতে নামা ম্যাচে সেঞ্চুরি আশরাফুলের

প্রাইম ব্যাংকের সাথে প্রথম ম্যাচে রান পাননি। ফিরে গিয়েছিলেন ১৪ রানে। আবাহনীর বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৫ বলে করেছিলেন মোটে ২৫। অতিবড় আশরাফুল ভক্তও যা দেখে হতাশায় মুষড়ে পড়েছিলেন। আশা ভঙ্গের বেদনায় নীল সমর্থকদের মনে অজানা শঙ্কা এসে বাসা বেধেছিল তবে কি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না আশরাফুল?

Advertisement

কিন্তু তৃতীয় ম্যাচেই সে শঙ্কা কেটে যায়। আবাহনীর বিপক্ষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ৩৫.২১ স্ট্রাইকরেটে ২৫ রান করা আশরাফুল ঠিক পরের খেলায় শক্তিশালী প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বসেন। ৭৯.৩৮ স্ট্রাইকরেটে তার ব্যাট থেকে আসা ১৩১ বলে ১০৪ রানের ইনিংসটির পরও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায় কলাবাগান ক্রীড়া চক্র।

তবে আশরাফুলের অমন সেঞ্চুরির পর অতিবড় তার বিরোধিও চুপ মেরে যান। সবার মনে হয়, নাহ্ এখনো ফুরিয়ে যাননি এ নন্দিত-নিন্দিত ক্রিকেটার। ব্যাটে আগের সেই তেজ আর বাহারি মারের তোড় না থাকলেও ব্যাকরণ মেনে বলের মেধা ও গুণ বিচার করে লম্বা ইনিংস খেলার সামর্থ্যটা আছে আগের মতই।

কিন্তু হায়! যখনি অমন ভাবতে শুরু করা, ঠিক তখনি আবার অতলে তলিয়ে যাওয়া। শতরানের পর একদম টানা ব্যর্থ আশরাফুল। গাজী গ্রুপ, শাইনপুকুর আর খেলাঘরের বিপক্ষে পর পর তিন খেলায় ব্যর্থতার ঘানি টানা। শেষ তিন ইনিংসে (৮+০+০) রান মোটে ৮।

Advertisement

শতরানের পর কোথায় উজ্জীবিত হবেন, ব্যাট কথা বলবে, রানের নহর বইবে, তা না উল্টো নিজেকে হারিয়ে ফেলা। প্রিয় ছাত্রের এমন করুণ পারফরমেন্স দেখে হতাশ কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী। কলাবাগান কর্তারা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। এটা কোন পারফরমেন্স হলো? তিন ম্যাচে আট রান! ভাবা যায়! আর শেষ দুই ম্যাচে জোড়া শূন্য!

নাহ ঢের হয়েছে। আর নয়। এমন বাজে পারফরমেন্সের পর আশরাফুলকে আর খেলানো ঠিক হবে না। তাকে ড্রপ করা ছাড়া আর পথ নেই। এমন ভাবনা এসে ভড় করে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আজ (রোববার) অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে খেলার আগেই সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে যায়, এ ম্যাচ খেলানো হবে না আশরাফুলকে।

সেই মত আগের রাতে কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীর ফোন, ‘আশরাফুল শোন, পর পর তিন ম্যাচে রান নেই। তোর এখন একটু ব্রেক দরকার। তুই কাল না খেললি। আমরা তোকে ড্রপ দেয়ার কথা ভাবছি। একটি ম্যাচ বাইরে থাক।’

কোচের এমন ফোনে যেন সম্বিৎ ফিরে পাওয়া। তবে কি আমার এবারের লিগ শেষ? আমি কি শেষ পর্যন্ত একাদশের বাইরে চলে যাচ্ছি? এই ভেবে ভেবে আধো ঘুম আধো জাগা অবস্থায় রাত পার করা। সকালে খেলা শুরুর আগে বিকেএসপি মাঠে গিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে অনুনয় বিননয়! ‘ভাই প্লিজ আমাকে ড্রপ দিয়েন না। আর একটি ম্যাচ সুযোগ দেয়া যায় না? আমাকে কাইন্ডলি আজকের ম্যাচটি খেলতে দিন। আজ ব্যর্থ হলেই ড্রপ করে দিয়েন। প্লিজ আজ খেলতে দিন। শুধু এই ম্যাচটি খেলতে চাই। এদিন রান করতে না পারলে আর খেলানোর অনুরোধ করবো না।’

Advertisement

এমন বলে কয়ে মাঠে নামা। আর খেলতে নেমেই বাজিমাৎ। তার দায়িত্বপূর্ণ শতকেই অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে ম্যাচ জিতেছে কলাবাগান। লক্ষ্য কম ছিল না। জিততে দরকার ছিল ২৫৩। তরুণ ওপেনার তাসামুল হক সেঞ্চুরি সহ ৯২.১৭ স্ট্রাইকরেটে ১১৫ বলে ১০৬ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস উপহার দিলে জয়ের ভীত গড়ে ওঠে। আর তিন নম্বরে নামা আশরাফুল দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একদিক আগলে রাখার কাজটি করে ১৩৬ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ১০২ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দেন। তাতেই আট বল আগে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কলাবাগান।

এমন বলে কয়ে শতরান করে ম্যাচ জেতানো আশরাফুলের পক্ষেই সম্ভব। রোববার বিকেএসপি মাঠে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে এ ম্যাচ জেতানো শতরানের পর জাগো নিউজের সাথে আলাপে আশরাফুল বলেন, আগের তিন ম্যাচে খুব খারাপ খেলেছি। তবে ভাগ্যও অনুকূল ছিল না। অদ্ভুত কিছু আউট হয়েছি। যা দেখে টিম ম্যানেজমেন্ট হতাশ হয়ে আজ আমাকে খেলাতেই চাননি।

তাই তো জালাল স্যার (কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী) আগের রাতে ফোন করে বলেছিলেন, তুই এ ম্যাচে একাদশে নেই। আমি আজ সকালে মাঠে গিয়ে অনেক অনুরোধ করেছি আমাকে খেলানোর। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন সহায়। তার কৃপায় আবার রানে ফেরা। খুব ভালো লাগছে। দলের সবাই খুশি। আমারও মন ভালো। আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে নিজেকে। জালাল স্যার রসিকতা করে বললেন, এখন থেকে তোকে প্রতি খেলার আগের রাতে ফোন করে বলবো, তুই কাল ড্রপ!

কলাবাগান কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী অবশ্য বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখতে চাচ্ছেন। তার কথা আমি চাই আশরাফুলের সেরাটা বের করতে। আমি বিশ্বাস করি এখনো সে ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচে চরম ব্যর্থ আশরাফুলকে রানে ফেরাতেই এ ম্যাচে ড্রপ দেয়ার ভয় দেখিয়েছিলাম। মাঠে তার খেলার আকুতি দেখে বলেছিলাম তুই ফ্রি হয়ে খেল।

এআরবি/এমআর/জেআইএম