দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের বনগাঁও কালিতলা পার্কিংয়ে আটকে আছে ৫ হাজারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। এসব পণ্য দিনের পর দিন বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানকার একটি সিন্ডিকেট এর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। টাকা দিলেই আগে প্রবেশের সিরিয়াল হয়ে যায়। টাকা না দিলে কখনো ১৫ দিন কখনো ২০ থেকে এক মাসও সময় লাগে ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসতে। এ কারণে স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ক্রমেই আমদানি বাণিজ্য কমে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামছে।
Advertisement
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশের স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়নি। উল্লেখিত সময়ে বেনাপোলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৩২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬২০ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন পণ্য।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়ার নির্দেশে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে দু‘দেশের ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও আমদানি বাণিজ্য বাড়াতে পারছেন না। এ অবস্থায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে অবিলম্বে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করলে আমদানি রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। সেইসঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
ওপারে ভারতের বনগাঁও কালিতলা পার্কিংয়ে পৌরসভার লোকজন সিরিয়ালের নামে পণ্যবাহী ট্রাক দিনের পর দিন আটকে রেখে ড্যামারেজ বাবদ হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি করছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বেনাপোল চেকপোস্টে নানা ধরনের বাড়তি নিয়মকানুন চালু করায় ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে বিলম্ব হচ্ছে। বর্তমানে ঋণ পত্র (এলসি) খোলার পর ভারত থেকে পণ্য আসতে ২০ দিন থেকে এক মাস সময় লাগছে।
Advertisement
বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয় একেকটি ট্রাক তিনটি স্থানে এন্ট্রি করতে ২০ মিনিট করে সময় লাগায় সারাদিনে ট্রাক আসা কমে গেছে। ইতোপূর্বে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫শ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। সময় ক্ষেপণের কারণে বর্তমানে ট্রাকের আমদানি সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ ট্রাকে। চেকপোস্টে বিজিবি, কাস্টমস ও বন্দর আলাদাভাবে রেজিস্ট্রার খাতায় ট্রাক এন্ট্রি করায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বন্দরে যে মূল্যে শুল্কায়ন হয় বেনাপোলে তার চেয়ে বেশি মূল্যে শুল্কায়ন করায় আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে চট্টগ্রামসহ অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছে। নানা জটিলতার কারণে অধিকাংশ আমদানিকারক বৈধ পথে আমদানি কমিয়ে চোরাই পথে পণ্য আমদানি করছেন।
এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আমদানি পণ্যের ট্যারিফমূল্য করা হলেও সেই মূল্যে থেকে বাড়িয়ে অধিক মূল্যে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির কারণে আর পণ্য আমদানি করছে না। তাছাড়াও কাস্টমস শুল্ক আদায় করে ছেড়ে দিলেও পথিমধ্যে বিজিবি সেইসব ট্রাক আটকিয়ে বেশি পণ্য আছে এই অজুহাতে ৭ থেকে ১০ দিন পুনরায় পরীক্ষা করে পণ্য দেখা হবে এই অজুহাতে ট্রাক আটকে রাখে। সরকারি শুল্ক পরিশোধ করার পরও বিজিবি পণ্যবাহী ট্রাক আটক করার কারণে অনেক ব্যবসায়ী অন্য বন্দরে চলে গেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে।
বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, কাস্টমস চেকপোস্টের একটি পয়েন্টে ট্রাক এন্ট্রি করলে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি বাড়বে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। আমদানিকৃত পণ্যের ওপর মনগড়া মূল্য চাপিয়ে শুল্কায়ন বন্ধসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে এই বন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব বলে ব্যবসায়ীরা অভিমত দিয়েছেন।
Advertisement
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে সারা দেশের কাস্টমস হাউসে আইডেনটিকাল পণ্যের একই মূল্যে শুল্কায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
জামাল হোসেন/এফএ/জেআইএম