সমালোচকরা বলেন, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে পারেনা। পরিসংখ্যানও সে সাক্ষীই দিচ্ছে। গত বছর ছয়-ছয়টি ম্যাচ খেলে একটি মাত্র ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। সেটাও সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে ।
Advertisement
২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার সাথে সাকিবের দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে (ব্যাট হাতে ৩১ বলে ৩৮ আর ২৪ রানে ৩ উইকেট শিকার) বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৫ রানের বড় জয়।
মোদ্দা কথা, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটেই ভালো না। তার ওপর এই সেদিন ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে দুই ম্যাচের সিরিজে চরম নাজেহাল হতে হয়েছে।
সব মিলে চাপে টাইগাররা। এরকম চাপে থেকে নিদাহাস ট্রফি খেলতে যাওয়া। যেখানে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ছাড়াও প্রতিপক্ষ ভারত। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনির মত দুই শীর্ষ তারকা না থাকলেও ভারত এখন খুবই শক্তিশালী দল। কঠিনতম প্রতিপক্ষ। কলম্বো আসার আগে যে দল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের চরম ভাবে পর্যুদস্ত করে এসেছে।
Advertisement
সেই দুই দলের সাথে লড়াই মানেই ‘অগ্নি পরীক্ষা।’ ভারপ্রাপ্ত কোচ কোর্টনি ওয়ালশ নিজ দলকে আন্ডারডগ মেনেই বলেছেন , ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারলে ফাইনালে ওঠা অসম্ভব নয়।
এত গেল কোচের কথা। অধিনায়ক কি ভাবছেন? তার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা কি? দেশ ছাড়ার আগে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে মাহমুদউল্লাহ পরিষ্কার বলে গেছেন, নিদাহাস ট্রফি তাদের সামর্থ্য প্রমাণের আসর।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশ আসলে কতটা ভালো খেলতে পারে- তা প্রমাণের অনেক বড় এক প্ল্যাটফর্ম কলম্বোর এই তিন জাতি আসর। নিজেদের সময় যদিও ভালো যাচ্ছে না। তারপরও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর মনের গহীনে নিদাহাস ট্রফি জেতার স্বপ্ন। তাইতো যাবার আগে সে স্বপ্নের কথাই ফুটে উঠলো মুখে, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই টুর্নামেন্ট জেতা। ’
তবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ পাশাপাশি আরও কিছু করার চিন্তাও আঁটছেন। তার পরিষ্কার অনুভব, উপলব্ধি- তার দলের আরও কিছু করে দেখানো বাকি।
Advertisement
একটা ধারণা জন্মেছে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো খেলতে পারেনা। ভালো খেলার সামর্থ্যে ঘাটতি আছে। টাইগার ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ মনে করেন, নিদাহাস ট্রফি সে ধারণা অমূলক প্রমাণের একটা ভালো ক্ষেত্র হতে পারে।
তাই দেশ ছাড়ার আগে মাহমুদউল্লাহর মুখে এমন সংলাপ, ‘আমাদের অনেক কিছু করার বা করে দেখানো বাকি আছে। অনেক কিছুর প্রমাণ দেয়ারও বাকি আছে। এর আগে শেষ সংবাদ সম্মেলনেও আমি এই কথাটা বলছিলাম, অনেকের মনে হয়তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে একটা প্রশ্ন আছে। আমার মনে হয় এটা ( নিদাহাস ট্রফি) আমাদের জন্য খুব ভালো একটা মঞ্চ নিজেদেরকে প্রমাণ করার।’
টাইগার ক্যাপ্টেনের ধারণা, এ আসরেও ভালো কিছু করে দেখানো সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সবার সেরাটা দেয়া একান্তই জরুরী। তিনি বলেন, ‘সবারই যদি ব্যক্তিগত সেরাটা আদায় করে নিতে পারি, আমার মনে হয় আমাদের খুব ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব।’
মাঝে একটা সময় ধারাবাহিকভাবে দেশের মাটিতে ভালো খেলায় সবার প্রত্যাশা বেড়েছে। আর শেষ সিরিজটা ভালো যায়নি। তাই একটা হতাশাও আছে। তা কাটিয়ে ওঠার দৃঢ় প্রত্যয় মাহমুদউল্লাহর কন্ঠে, ‘মাঝে ঘরের মাটিতে আমরা খুব ভালো খেলছিলাম, তাই আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আমরা হয়তো শেষ সিরিজে আশানুরূপ পারফরম করতে পারিনি। তবে যেহেতু উপমহাদেশের পরিবেশ, বেশ অনেকবার আমরা খেলেছিও শ্রীলঙ্কায়। ইনশাআল্লাহ, আমরা ভালো কিছু করতে পারবো।’
এই সেদিন লঙ্কানরা বাংলাদেশে এসে টাইগারদের পর্যুদস্ত করে গেছে। শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে আরও শক্তিশালী। আর সাথে নিদাহাস ট্রফিতে আছে ফর্মের চূড়োয় থাকা ভারত।
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বলতে বলা হলে মাহমুদউল্লাহ বলে ওঠেন, ‘আসল ও শেষ কথা হলো ভালো খেলা। আপনি যার বিরুদ্ধেই খেলেন, আপনাকে ভালো খেলতেই হবে। প্রতিপক্ষ নিয়ে তাই চিন্তা করে লাভ নেই। যে কোনো প্রতিপক্ষই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসল কাজ হলো ভালো খেলা।’
ঘরের মাঠে তার অভাব অনুভূত হয়েছে। ব্যাট ও বলে সাকিব ‘টু ইন ওয়ান।’ চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার। তার অনুপস্থিতিতে দলে ব্যাটিং ও বোলিং দুইই কমজোরি হয়ে পড়ে। সাকিবের মত পারফরমারকে নিদাহাস ট্রফিতেও মিস করবেন মাহমুদউল্লাহ। দেশসেরা অলরাউন্ডারকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাকিবকে অবশ্যই মিস করবো। সাকিবের না থাকা অবশ্যই দলের জন্য ক্ষতিকর। সে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়, অপরিহার্য পারফরমার। তার অভাব অনুভূত হবেই। সেটা কাটিয়ে ওঠাও খুব কঠিন।’
তবে মাহমুদউল্লাহ মনে করেন, সাকিবের অনুপস্থিতিতে বাকিদের ভালো করার একটা জায়গাও তৈরি হবে। বাকিরা এখন আরও ভালো কিছু করে দেখাতে চাইবে, বিশ্বাস তার, ‘সাকিব না থাকার অর্থ, আমাদের সবার ভালো কিছু করে দেখানোর সুযোগ।’
বাংলাদেশের সব অধিনায়ক যে কোনো সিরিজ, টুর্নামেন্ট বা মিশন শুরুর আগে যা বলেন, নিদাহাস ট্রফি খেলতে যাবার ঠিক আগে মাহমুদউল্লাহর মুখেও সেই কথা, ‘আমাদের শুরুটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবসময়ই বিশ্বাস করি শুরুটা যদি ভালো হয়, তাহলে আমরা ছন্দ পাই। মোমেনটাম চলে আসে। আমার মনে হয় একটা ম্যাচই আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট। প্রথম ম্যাচটা যদি জিততে পারি, ইনশাআল্লাহ দল উজ্জীবিত হবে। অনুপ্রাণিত হবে। আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। যা পরের ম্যাচগুলোয় ভালো করার প্রেরণা যোগাবে।’
সবার জানা, খালেদ মাহমুদ সুজন তার গুরু। প্রথমে শোনা যাচ্ছিলো, তিনি নাও যেতে পারেন। পরে অবশ্য তিনি দলের সফরসঙ্গী হয়েছেন। খালেদ মাহমুদ সুজন দলের সাথে থাকলে তিনি নিজে অনেকটাই স্বস্তিবোধ করেন। সুজনের উপস্থিতি মাহমুদউল্লাহকে চাঙ্গা করার জন্য যথেষ্ট। আজ বিমানের ওঠার আগে সেই গুরু সুজনকে সাথে পেয়ে খুশি মাহমুদউল্লাহর মনে স্বস্তির পরশ। মুখেও তার বহিঃপ্রকাশ, ‘সুজন ভাই থাকা সবসময়ই অ্যাডভান্টেজ।’
এআরবি/এমএমআর/আরআইপি