ত্রিপুরায় বামদুর্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গেরুয়া ঝড়ে বিধ্বস্ত রাজ্যের রাজনীতি। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে বিজেপি ও আদিবাসীদের সংগঠন আইপিএফটির জোট। ফলে এই রাজ্যে বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিজেপির মাথায় উঠছে রাজ্যের মুকুট।
Advertisement
ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের ৫৯টিতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি ৩৫টিতে, আইপিএফটি ৮টিতে এবং সিপিআইএম ১৩টিতে জয়ী হয়েছে। তিনটি আসনের ফল এখনো পাওয়া যায়নি।
এ নির্বাচনে বিজেপি বিপুল ভোটে জয়ী হলেও বছর পাঁচেক আগে রাজ্যে প্রায় অস্তিত্বহীন ছিল দলটি। এরপরও বিজেপির বিজয়ের পেছনে ৫টি কারণকে মুখ্য মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া: দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বামপন্থীরা। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজেই ২০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী। তাই ক্ষমতাসীন সরকারবিরোধী হাওয়া এবার ছিলই, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বিজেপি নিজেদের মূল স্লোগানও দিয়েছিল ‘চলো পাল্টাই।’ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গৌতম চাকমা মনে করেন, বহু মানুষ যে বিজেপিকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে, তা মনে হয় না। তারা বামফ্রন্ট সরকারকে পাল্টাতে চেয়েছে বলেই তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
Advertisement
বেকারত্ব-দুর্নীতির অভিযোগ: বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের ভোট পেয়েছে এবার- যাদের শিক্ষাদীক্ষা রয়েছে, কিন্তু হাতে কোনও কাজ নেই। সাংবাদিক আশিষ গুপ্তের ভাষায়, ত্রিপুরাতে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, এটা কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। তা সত্ত্বেও যেভাবে অনুন্নয়নের কথা বলে বিজেপি জিতল, এটা সত্যিই অভাবনীয়।
আদিবাসী ভোট বিজেপির দিকে: ত্রিপুরার এক-তৃতীয়াংশ আসন আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। সিপিআই এম নেতা গৌতম দাসের কথায়, ‘ওটাই ছিল আমাদের অন্যতম শক্ত জনভিত্তি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেখানে আমরা প্রায় কিছুই জিততে পারিনি। ওটাই আমাদের সবথেকে বড় ক্ষতি।’
তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়তে পেরেছে বিজেপি: বিগত নির্বাচনে যে দল কোনও শক্তি হিসাবেই পরিগণিত হত না, সেই দলই এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হতে পারল - কারণ তারা গত প্রায় দু’বছর ধরে জোর দিয়েছিল তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়ে তুলতে।
আশিস গুপ্ত বলছেন, একটা সময়ে বামপন্থীরা যেভাবে ভোট করাত তৃণমূল স্তরে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে, এবার বিজেপি সেটাই করেছে। ভোটার লিস্ট ধরে বুথভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিল তারা অনেকদিন আগেই। বামপন্থীরা সংগঠনের গর্ব করে - কিন্তু সেই আগের মতো করে ভোট করানোর দিকে তাদের নজর ছিল না।
Advertisement
কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস হয়ে বিজেপিতে যোগ দেয়া নেতারা: বহু দিন ধরে কংগ্রেসই ছিল ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের প্রধান বিরোধী শক্তি। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে কংগ্রেসের একটা বড় অংশ যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসে - আর বছর কয়েক আগে সেই গোটা অংশটাই চলে আসে বিজেপিতে।
এনএফ/এমএস