জাতীয়

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন চাইলেন হাসিনা

বাংলাদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচারে বিশ্বসম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই বিচার চলছে।  একই সঙ্গে শেখ হাসিনা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে শনিবার দেয়া ভাষণে এই আহ্বান জানান  প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২২ মিনিটে  করতালির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শুরু করেন।বাংলায় দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, “অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ সম্পন্ন করেছে। আমরা জনগণের দীর্ঘদিনের ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থন প্রত্যাশা করছি।”সুষম উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে শান্তির কথা স্মরণ দিয়ে শেখ হাসিনা  বলেন, “স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যতীত আমরা টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে পারব না। আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অস্থিতিশীল বৈশ্বিক নিরাপত্তা অবস্থা এখনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে শান্তি বিঘ্নিত হলে তা গোটা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।” তিনি শান্তি বজায় রাখতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের অনমনীয়  নীতির কথা উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী বা অন্যদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার ক্ষেত্রে তার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।ভাষণের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, “বাঙালি জাতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সামাজিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য-ক্ষুধা-আগ্রাসনমুক্ত এবং বৈষম্যহীন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো রাষ্ট্রের প্রগতিশীল ও উদার চরিত্রকে নস্যাৎ করতে তৎপর বলে বিশ্বসম্প্রদায়কে জানান শেখ হাসিনা। তিনি অভিযোগ করেন, “তারা সুযোগ পেলেই ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোমা ও গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে অসংখ্য উদার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হত্যা করেছে।” সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন হাসিনা।শান্তি ও আইনের শাসন সমুন্নত এবং দণ্ড অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার প্রতি অঙ্গীকার থেকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে বলে বিশ্ববাসীকে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ জন্য ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, ধর্ষণ এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।”গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি বিশ্বসম্প্রদায়কেও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান।অধিবেশন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা ছাড়াও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিন ওভারমায়ার উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement