রাজশাহীতে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট নিয়ে চলছে বাণিজ্য। ফলে, পরিবারের সকলের সঙ্গে ঈদ শেষে ঢাকার কর্মস্থলে ফিরতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন রাজশাহীর যাত্রীরা। টিকিট পর্যাপ্ত থাকলেও প্রতিদিন নামে মাত্র কয়েকটি টিকিট বিক্রি করে কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, রাজশাহী টু ঢাকাগামী ট্রেনের সকল টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আহসানউল্লাহ্ ও রাজশাহী রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল করিম হুকুম দিলেই কেবল এসি-নন এসিসহ সকল ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। তবে তার বিনিময়ে টিকিটের মূল্যের সঙ্গে বাড়তি কিছু টাকা পৌঁছে দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দালালদের হাতে। পরে তারা টিকিট কাউন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে টিকিট এনে দিচ্ছেন ঢাকাগামী যাত্রীদের। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে রাজশাহী স্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকায় ফেরার জন্য টিকিট কিনতে ভোর থেকেই সাধারণ মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে মাত্র কয়েক জনের কাছে টিকিট বিক্রি করেই জানিয়ে দেয়া হচ্ছে আর টিকিট নেই। ফলে টিকেট না পেয়ে প্রতিদিনই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের। রাজশাহী-ঢাকা রুটের চারটি আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টিকিট দেয়া হয়। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে আসন কম হওয়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব মুক্তাদির নামের এক চাকরিজীবী জানান, নির্ধারিত ছুটি শেষে ঢাকায় না ফিরতে পারলে নানা ঝামেলায় পড়তে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি টিকিট পাননি। অপর যাত্রী সুমন অভিযোগ করে জাগো নিউজকে জানান, রেলস্টেশনে র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতেই টিকিট কালো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি এসি টিকিট চারশ টাকা বেশি নিয়ে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, প্রতি ঈদেই রেলের একশ্রেণির কর্মকর্তারা রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে টিকিট বাণিজ্যে নামেন। বেশী মূল্যে টিকিট বিক্রির জন্য বেশিরভাগ টিকিটই রেখে দেন তাদের হাতে। আর সাধারণ যাত্রীদের জন্য যে সংখ্যক টিকিট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তা চাহিদার বিপরীতে অতি নগণ্য। তাও লোক দেখানো। বিভিন্ন কোটার টিকিট নিয়েও তারা বাণিজ্য করছেন। আর তারাই আগে থেকে টিকেট বুকিং দিয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রভাবশালীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম নিজেও বিভিন্ন কোটার নামে কয়েকশ টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছেন। টিকিট কাউন্টারে থাকা প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন জাগো নিউজকে জানান, স্টেশন সুপারের অনুমতি ছাড়া কোনো এসি টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। এসি টিকেট নিতে হলে তার অনুমতি লাগবে। এদিকে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আহসানউল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, টিকিট বিক্রিতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। টিকিট বিক্রির সব তথ্য কম্পিউটার সার্ভারেই রয়েছে।তবে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি করে জাগো নিউজকে জানান, যাত্রী অনুযায়ী ট্রেনের আসন সংখ্যা কম। তাই যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/আরআইপি
Advertisement