একুশে বইমেলা

শেষ বেলার বইমেলা

এত প্রাণ! তবুও পর্দা নামল! তবুও দ্বার বন্ধ করতেই হলো! আর ক’দিন থাকলেই বা কি হত? বইয়ের মেলা কি সময় ধরে হয়? চলুক না অনন্ত কাল ধরে। না, তা কি করে হয়? লাগাম তো টানতেই হয়। সমস্ত আয়োজনেরই তো শেষ আছে। শেষ হলো মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলাও।

Advertisement

শেষ দিনের মেলা। ফের বছরের অপেক্ষা। তর যেন সইছিল না। দুপুরের পর থেকেই মেলায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে বইপ্রেমীরা। মনের অতৃপ্ত বাসনা পূরণের এদিন হাতছাড়া করতে চায়নি কেউই। শেষবেলার মেলায় যারা এসেছেন, তারা বই কেনার তাগিদ নিয়েই এসেছিলেন। কিনলেনও বটে।

সবার হাতেই বই। কেউ কেউ দু’হাত ভরলেন বইয়ের ব্যাগে। যেন আনন্দবাজার ভাঙার আগেই ব্যাগে ব্যাগে আনন্দপুরে বাড়ি ফেরা।

সাহিত্যে প্রেম আসক্তি ঘটলো মাস ভর। বইপড়া মানুষের হাট বসেছিল শাহবাগ, বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আহা! কি প্রেম সেথায়! প্রাণের টানে প্রাণ মেলে ধরলো লাখো মানুষ।

Advertisement

বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর মহান একুশের আবেগের ঢেউ উপচে পড়ছিল মেলার তীরে তীরে। শেষের দিনগুলোয় তিল ধরার ঠাঁই ছিল। এখন সবই যেন স্মৃতি। সবই জানা, তবুও যেন বিষাদের সুর লহরি বাজলো হঠাৎই। বাজুক বিষাদের সুর। তাই বলে কি এমন আনন্দমেলার আয়োজন বিস্মৃতি হয়!

যে প্রেমরসে সাহিত্য ধারা প্রবাহমান, তাতে বছর পার হবে বৈকি। বছরের খোড়াক তো এক মাসেই মিললো। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বলেন, মেলাটি বড় আপন হয়ে গেছে। বছর ধরে প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রস্তুতি নিতে হয় লেখক, পাঠক, প্রকাশককেও।

মাসব্যাপী চলা মেলার শেষদিন পাজরে বিষাদের ঘা লাগেই বটে। এত মানুষ, এত ভালোবাসা তো অন্য কোনো আয়োজনে মেলে না। বই প্রকাশ এবং বিক্রির দিক দিয়ে এবারের মেলা রেকর্ড গড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মেলায় প্রায় শত কোটি টাকা বই বিক্রি হতে পারে। এবারে বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও রেকর্ড গড়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া শেষ করতে পেরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্রকাশক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, বইমেলাকে নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। বেশ বিক্রি হয়েছে। শেষদিনে বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

তবে মেলার স্টল নম্বর বসানো নিয়ে কিছুটা আপত্তি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি সঠিক সিরিয়াল অনুযায়ী বসানো হয়নি। অন্য প্রকাশের জনসংযোগ বিভাগে নিয়োজিত আলা উদ্দিন টিপু বলেন, বেচা-বিক্রি এবার অনেক ভালো ছিল। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খুব ভালো হয়েছে। শেষ দিনের বিক্রিতে সন্তুষ্ট আমরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলার আজ শেষ দিন। কিছু বই কেনা বাকি ছিল সেগুলো কিনে নিতেই মেলায় এসেছি।

আফসানা নিগার নামে ইডেন মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, এবারের মেলা থেকে বেশ কিছু বই কিনেছি। আজও তিনটি বই কিনেছি। আরও কিনার টার্গেট আছে। মেলাতো শেষ।

কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন সেলিম বলেন, মেলা আজ শেষ হচ্ছে। বইমেলা তো শুধু ব্যবসার জন্য নয়। আবেগ, ভালোবাসার জায়গা। ফের ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কষ্ট তো কিছুটা লাগেই। শেষদিনে বিক্রি বেশি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এদিন যারা মেলায় আসেন, তারা ঠিক বই কেনার জন্যই আসেন। আর এ কারণেই আজ সবার হাতে হাতে বইয়ের ব্যাগ দেখা গেছে।

এএসএস/এমএইচ/এমআরএম/জেআইএম