আন্তর্জাতিক

মিসরে চার বছরে নিখোঁজ ১৫০০

মিসরের একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে, দেশটিতে গত চার বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে বলে তাদের কাছে দলিলপত্র আছে। কিন্তু তাদের মতে আসল সংখ্যা আরো অনেক বেশি। মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ লফতির ভাষায়, প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসির শাসনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব রহস্যজনক অন্তর্ধান। খবর বিবিসি।

Advertisement

সরকারের বিরোধী বা বিরোধী বলে সন্দেহ করা হয় এমন যে কেউ এখন ঝুঁকির মুখে। সে সন্দেহ ঠিক হোক বা না হোক তাতে কিছু যায় আসে না। সন্দেহভাজনদের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুরাও কখনো কখনো গ্রেফতার হতে পারেন। এসব আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু অনেকে ইসলামপন্থী।

মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, এইসব নিখোঁজরা যখন কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে আবার আবির্ভূত হন, তার আগে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে আনা হয় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ। কায়রোর হাসপাতালে মানসিক বিপর্যয়ের কারণে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২৩ বছরের জুবেইদা। তার ছোট ভাই তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার জন্য জন্য রওনা হলেন। পথে একটা ওষুধের দোকানের কাছে জুবেইদাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার জন্য ওষুধ কিনতে ঢুকলেন তার ভাই।

কয়েক মিনিট পর তার ভাই বেরিয়ে এসে দেখলেন জুবেইদা নেই। জুবেইদাকে আর কখনো দেখা যায় নি। মিশরের অসংখ্য নিখোঁজদের তালিকায় উঠে গেছেন তিনি। গত ১০ মাস ধরে জুবেইদাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার স্বজনরা।

Advertisement

জুবেইদার মা বলেন, জানি পুলিশই তাকে নিয়ে গেছে। আমাদের প্রতিবেশীরা বলছে, মুখোশ পরা অস্ত্রধারী লোকেরা পুলিশের গাড়িতে করে এসে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা আমাদের পুরোনো বাড়িতেও গিয়েছিল, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে।

জুবেইদার হাতে তার ভাইয়ের মোবাইল ছিল। তিনি আটক হবার পর একটা ফোন করতে পেরেছিলেন একজন আত্মীয়কে। এক কর্মকর্তা জুবেইদাকে গালাগালি করছেন এমনটা শোনা যাচ্ছিল। তারপরই ফোনটা বন্ধ করে দেয়া হয়।

আসলে ঘটনার শুরু তারও কয়েক বছর আগে। ২০১৪ সালে জুবেইদা এবং তার মা একটি নিষিদ্ধ সমাবেশে যোগ দেবার অপরাধে সাত মাসের জেল খেটেছিলেন, তবে পরে তাদের খালাস দেয়া হয়েছিল। জুবেইদার মা জানান, পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে ১৪ ঘন্টা ধরে মারধর করে, গালাগালি করে।

আমাদের নির্যাতন করা হয়, বিদ্যুতের শক দেয়া হয়। আমরা একটা হোটেলে বোমা ফাটানোর পরিকল্পনা করেছি, আমাদের কাছে অস্ত্র আছে এই সব মিথ্যা অভিযোগ আমাদের স্বীকার করতে বলা হয়। আমি জুবেইদার চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।

Advertisement

জুবেইদার মা বলেন, ওরা হুমকি দিল, আমরা অভিযোগ স্বীকার না করলে আমরা সামনেই জুবেইদাকে ধর্ষণ করবে। তবুও আমরা স্বীকার করিনি। তিনি বলেন, তারা কখনো মুসলিম ব্রাদারহুড বা অন্য কোন নিষিদ্ধ সংগঠন করেননি। ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট হবার এক বছরের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ২০১৩ সালে ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাত মাস জেলে থাকার পরে তারা ছাড়া পান।

তার বছর দুয়েক পরই ২০১৬ সালের জুলাই মাসে প্রথম বারের মতো জুবেইদা নিখোঁজ হন। তার মায়ের কথা, সেবারও পুলিশই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এর ২৮ দিন পর জুবেইদাকে পাওয়া যায় শহরের উপকণ্ঠে। সেখানে পুলিশ তাকে হাত, পা এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গিয়েছিল। তার গায়ে ছিল কাটা দাগ, বিদ্যুতের শক দেবার দাগ। সব রকম অত্যাচারই তার ওপর করেছে তারা।

এর পর জুবেইদার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাকে হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেরুনোর পরই আবার তাকে অপহরণ করা হয় এবং তিনি আর ফেরেন নি। এরকম বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সিসির সময় মিসরে ১৭টি নতুন কারাগার নির্মিত হয়েছে। রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, মানবাধিকারের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, এটা ইউরোপ নয়, এটা অন্য জায়গা। মানবাধিকার গ্রুপগুলোর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

টিটিএন/পিআর