অর্থনীতি

চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব ‘আইনের পরিপন্থী’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে চীনের দুই পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার মধ্যে কিছু বিষয় বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত কমিটি। এরই আলোকে বিএসইসি ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছে।

Advertisement

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএসইর সঙ্গে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর চুক্তি যুক্তরাজ্যের (ইউনাইটেড কিংডম) আইন অনুযায়ী করার শর্ত দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম। সেই সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তার সমঝোতা লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিটেশন অনুযায়ী করার শর্ত দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কোনো কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্ত করতে চীনের কনসোর্টিয়ামের অনুমোদনও নিতে হবে- এমন শর্তও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিটির অভিমত, ওই তিন শর্তই বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী এবং তা বিবেচনার সুযোগ নেই। এছাড়া আর্টিকেলে প্রস্তাবিত ধারাগুলো সংযোজন করলে ডিএসই চাইনিজ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর অনুমোদন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে না।

সূত্র আরও জানায়, চীনের কনসোর্টিয়ামের অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- নতুন কোনো শেয়ার ইস্যু, পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তন, ১৫ শতাংশের বেশি যে কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ, ১০ কোটি টাকার ওপরে যে কোনো চুক্তি, ১০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ করতে চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন নিতে হবে।পাশাপাশি ডিএসইর আইপিও-সংক্রান্ত যে কোনো ইস্যু যেমন- শেয়ারের মূল্য, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপ্রেক্টাস অনুমোদন এবং ইস্যু মূল্য নির্ধারণেও চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন লাগবে- এমন শর্তও জুড়ে দিয়েছে চীনের প্রতিষ্ঠানটি।

Advertisement

ডিএসইর আর্টিকেলের ১৩৫-এ একটি নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা রয়েছে, ফলে ডিএসই যে কোনো শেয়ারধারী যার ন্যূনতম দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, তার সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। চাইনিজ কৌশলগত বিনিয়োগকারী এ ধারা থেকে অব্যাহতি চেয়েছে। বিএসইসি কমিটির পর্যালোচনায় এমন তথ্যও উঠে এসেছে।

একই সঙ্গে আর্টিকেলে যাই থাকুক না কেন চাইনিজ কৌশলগত বিনিয়োগকারী তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগদানের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সেটেলমেন্ট গ্রান্টি ফান্ড কনটিবিউশন বাদ দেয়া বা স্থগিতের প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়েও ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি।

এদিকে চীনের কনসোর্টিয়াম যে ৩০০ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা দেবে বলে ডিএসই দাবি করছে, তা নির্ধারণে কোনো নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই বলে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন পরিপন্থী প্রস্তাব দিয়েছে বলে বিএসইসির পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এ বিষয়ে কমিটির অভিমত দিয়েছে, ভারতের এনএসই কনসোর্টিয়াম পাঁচ বছর পর যে কারো কাছে শেয়ার বিক্রির সুযোগ চেয়েছে, যা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের পরিপন্থী।

Advertisement

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কমিটির পর্যালোচনায় যে সব বিষয় উঠে এসেছে, সে সম্পর্কে ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ডিএসইর ব্যাখ্যা পাওয়ার পর কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

ডিএসইর ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে কী হবে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। ডিএসইর ব্যাখ্যা যুক্তিসঙ্গত না হলে কমিশন আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।

ডিএসই'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, অংশীদার বাছাইয়ে কমিশনের কমিটি কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। আমরা সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেব। দেশের আইনের পরিপন্থী বিষয় থাকলে সেটি বাদ দেয়া হবে। আইন সমর্থন করে না- এমন বিষয়ে কিছুই করা হবে না।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনাপর্ষদের বোর্ড সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডিএসইর সচিব মো. আসাদুর রহমান বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেন।

ওই দিনই ডিএসইর প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলমকে। কমিটির ওই অন্য দুই সদস্য হলেন- নির্বাহী পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

এমএএস/জেএইচ/এমএস