জাতীয়

দেশে জোড়া মাথা জমজের প্রথম অস্ত্রোপচার মঙ্গলবার

জমজ কন্যাশিশু রাবেয়া ও রুকাইয়া। হাত-পা সবই অালাদা। শুধু মাথাটা জোড়া লাগানো। পাবনার চাটমোহরে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই জন্ম নেয় এই দুই বোন। জন্মের পর থেকেই স্কুলশিক্ষক বাবা-মা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়েছেন সন্তানদের মাথা অালাদা করার জন্য। কিন্তু কোনো উপায় মেলেনি। একপ্রকার হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তারা।

Advertisement

অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় রাবেয়া ও রুকাইয়ার মাথা আলাদা করতে অস্ত্রোপচার শুরু হবে মঙ্গলবার। নিউরো-সার্জারি বিষয়ে বিশ্বখ্যাত দুজন বিদেশি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে দেশে এই প্রথম জোড়া মাথা অালাদা করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি।

এর আগে গত বছরের ১ আগস্ট ঢামেকে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছিল কোমরে জোড়া লাগানো গাইবান্ধার শিশু তৌফা ও তহুরার। তবে মাথার জোড়া আলাদা করার অস্ত্রোপচার এর আগে দেশে হয়নি।

সোমবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটের কনফারেন্স কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে এই অস্ত্রোপচার ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ড. সামন্তলাল সেন জানান, হাঙ্গেরি থেকে অাসা দুই বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্ড্রোস সুকে ও ডা. স্টিপেন হিউডের সমন্বয়ে ১৫ সদস্যের টিম প্রাথমিকভাবে চিকিৎসাটি কতটুকু সফল হবে তা মঙ্গলবার পর্যবেক্ষণ করবেন। এক্ষেত্রে জোড়া মাথার নিউরন অালাদা করার জন্য রক্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা ও মাথা অালাদা করার পর বেলুন স্থাপন করা যাবে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচারে এসব নির্ধারণ করা যায় তাহলে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার শুরু করা হবে।

Advertisement

তবে এমন চিকিৎসায় বিশ্বে ২০ শতাংশেরও কম চিকিৎসা সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিটের চিকিৎসকরা। তাদের দাবি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার এটি। বিশ্বে এমন প্রায় ৮০ শতাংশ চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এ চিকিৎসা যদি সফল হয় তাহলে চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশ নতুন এক সাফল্য অর্জন করবে বলে মনে করছেন তারা।

প্রেস ব্রিফিংয়ের অাগে ১৫ সদস্যের চিকিৎসক টিম রাবেয়া-রুকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন ও বাবা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত অালোচনা করেন। তারা এমন অস্ত্রোপচারে রাজি হওয়ায় মঙ্গলবার শুরু হবে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ।

ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ড. সামন্তলাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে শিশু দুটির চিকিৎসা পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অামাদের নির্দেশ দিয়েছেন, শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার তা করতে। এরপর অামরা বিশ্বখ্যাত দুজন চিকিৎসকে সমন্বয়ে একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি।

বিদেশি দুই চিকিৎসক সম্পর্কে ড. সেন বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমন অস্ত্রোপচার হলেও বিদেশি দুই চিকিৎসক নিউরো-সার্জারি বিষয়ে বিশ্বখ্যাত। তাদের এ বিষয়ে ৩০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।

Advertisement

চিকিৎসার বিষয়ে হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যান্ডোস সুকে সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শতকরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সফল না হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে অামরা চেষ্টার কোনো ক্রটি রাখব না। অপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্টিপেন হিউডেকও এ চিকিৎসায় সফল হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানান সাংবাদিকদের।

চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ায় প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শিশুদের মা-বাবা। সেইসঙ্গে তাদের সন্তানদের সুস্থতায় দোয়া চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে।

শিশু দুটির বাবা রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যখন কোনো উপায় না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ঠিক তখনই দেখলাম ঢাকা মেডিকেলে শিশু তোফা ও তহুরার সফল অস্ত্রোপচারের খবর। এ খবর দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের কাছে যাই। তিনি এটা দেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছবি পাঠান। পরে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় গত ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে অামাদের সন্তান রাবেয়া-রুকাইয়াকে ভর্তি করানো হয়।

রাবেয়া-রুকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, সন্তান দুটি জন্মের পর থেকে অামরা দুজন নানান জায়গায় বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছি চিকিৎসার জন্য। কোনো উপায় না পেয়ে আমরা একপ্রকার হতাশ হয়ে পড়ি। প্রধানমন্ত্রীর কারণে অামরা আশান্বিত হয়েছি। তার নিকট অামরা কৃতজ্ঞ। অাশা করছি দেশবাসীর দোয়ায় সন্তানদের অস্ত্রোপচার সফল হবে।

জেডএ/বিএ