শ্রীলঙ্কার সাথে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ক্রিকেটার নির্বাচন ও দল সাজানোয় বিস্তর পরীক্ষা- নিরীক্ষা চালানো হলেও এবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠেয় তিন জাতি টি-টোয়েন্টি আসর ‘নিদাহাস ট্রফি’তে দল সাজাতে গিয়ে আর আগের পথে হাঁটেননি নির্বাচকরা। দল নিয়ে বড় ধরণের কোনো পরীক্ষা- নিরীক্ষা চালানো হয়নি।
Advertisement
আবার প্রতিষ্ঠিত, পুরনো ও অভিজ্ঞ পারফরমারদের প্রাধান্যে দল সাজানো হয়েছে। তারপরও দুটি অন্তর্ভূক্তি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ব্যাটসম্যান কোটায় দলে রাখা হয়েছে ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান রুম্মনকে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দু'জনার অন্তর্ভুক্তিই প্রশ্নবিদ্ধ। এর মধ্যে সাব্বিরের অবস্থা খুব খারাপ। আর ইমরুলের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক মানদন্ডে রীতিমত অচল।
মাঠের বাইরে নানা শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া সাব্বির ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে পারছেন না। নগদ অর্থ দন্ডও গুনতে হয়েছে। মানসিক উৎপীড়নের কারণেই হোক কিংবা বল্গাহীন চলাফেরার জন্যই হোক, তার ব্যাটিংয়ের অবস্থা যারপরনাই খারাপ। এক কথায় ব্যাটসম্যান সাব্বির নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি; তিন ফরম্যাটেই রানের আকাল।
২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৬ রান করার পর সাব্বির টেস্টে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। পরের সাত ইনিংসে (২৪+৩০+৪+০+৪+০+১) রান সাকুল্যে ৬৩।
Advertisement
একই অবস্থা ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতেও। ওয়ানডেতে সেই গত বছর ২৪ মে ডাবলিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ বার হাফসেঞ্চুরি (৬৫) করেছিলেন। তারপর আর রান নেই। পরের ১১ খেলায় ( ২৪+৮+৮+১৯+১৯+ ১৭+৩৯+২৪+৬+১০+২ ) করেছেন মাত্র ১৭১ রান।
টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যান তো আরও জীর্ণ-শীর্ণ। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি মাউন্ট মোঙ্গানিয়ায় ১৫০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৩২ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংসই শেষ। তারপর নিজেকে হারিয়ে ফেলা। বড় স্কোরও নেই। স্ট্রাইকরেটও গেছে অনেক কমে। গড়পড়তা ১১২ স্ট্রাইকরেটে শেষ ছয় ম্যাচে (১৮+১৬+১৯+১৯+৫+১) তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৭৮ রান।
এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে , সাব্বির পরিষ্কার আউট অফ ফর্ম। তারপরও তাকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন জাতি আসরে নেয়া হয়েছে। কেন, কি বিবেচনায় আবারো সাব্বিরকে দলে রাখা হলো? আজ বিকেলে দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নর মুখোমুখি হলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
সাব্বিরকে রাখার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু যুক্তি টানলেন, গত এক বছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান সাব্বিরের। আর তার চেয়ে বড় কথা, তার অভিজ্ঞতা আছে। বিগ ম্যাচ খেলার টেম্পারামেন্টও আছে। প্রতিপক্ষ যেহেতু ভারতের মত শক্তিশালি ও পরিপক্ক দল, তাই সাব্বিরকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
Advertisement
প্রধান নির্বাচকের ভাষায়, ‘গত এক বছরে ওর টি-টোয়েন্টি রেকর্ডে দেখবেন, বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সাব্বিরের। সেই হিসেবে, ওর অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট। আর যেহেতু বিদেশে খেলা, অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে খেলা, ভারত আছে। এ জন্যই তাকে নেয়া। ও পিএসএল খেলতে গেছে, আশা করি সেখানে ফর্মে ফিরবে।’
পাশাপাশি ওপেনার ইমরুল কায়েসকে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে নেয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠলো জোরেশোরে। বাঁহাতি এই ওপনার টেস্ট এবং ওয়ানডে দলে থাকতেই পারেন। প্রশ্ন উঠেনা, উঠার কারণই নেই। খুব আহামরি না হলেও তার টেস্ট এবং ওয়ানডে পরিসংখ্যান মন্দ না। ৩৪ টেস্টে ২৬.২৩ গড়ে তিন শতক ও চার অর্ধশতকে ১৬৩৯ রান । আর ৭০ ওয়ানডেতে ২৮.৯৫ গড় এবং ৬৭.৯৩ স্ট্রাইকরেটে দুই সেঞ্চুরি ও ১৪ হাফ সেঞ্চুরি সহ ১৯৮৮ রান।
সেই তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে ইমরুলের পারফরমেন্স যাচ্ছে তাই। ১৪ ম্যাচে গড় মোটে ৯.১৫। কোনো ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৩৬। স্ট্রাইকরেটও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের তুলনায় অনেক কম, ৮৮.৮০।
এমন এক অনুজ্জ্বল পারফরমারকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের সাথে তৃতীয় ওপেনার বা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে কেন নেয়া হলো? তা নিয়ে সমালোচনার ঝড়।
আজ দল ঘোষণার সময় ইমরুলকে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক তুলে আনলেন ইমরুলের ফাস্ট বোলিং খেলার অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ইমরুল টেস্টে ওপেন করে থাকে এবং ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে তার ভালো খেলার রেকর্ড আছে, তাই থার্ড ওপেনার হিসেবে নেয়া।’
প্রধান নির্বাচকের কথা শুনে মনে হলো তারা ধরেই নিয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় পেস বোলারদের আধিক্য থাকবে। মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ভাষায়, ‘আমরা চাচ্ছি, যারা ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিং করতে পারে তাদের নিতে। যেহেতু ও টেস্টে ওপেন করে। শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে পেসারদের আধিক্য থাকবে। ভারতও অনেক পেসার নিয়ে খেলে। ওই সব চিন্তা করেই তৃতীয় ওপেনার হিসেবে ইমরুলকে নেয়া।’
মানা গেল, ইমরুল ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে সাবলীল। কিন্তু দেশে কি আর কোনো ওপেনার নেই যিনি ফাস্ট বোলিং ভালো খেলেন, রেকর্ডটাও ভালো? এমন প্রশ্নে প্রধান নির্বাচকের উত্তর, ‘অবশ্যই আছে। তবে আমরা অভিজ্ঞতাকে প্রধান বিবেচনায় এনেছি। একটা কারণেই মূল্যায়ন করেছি যে, যেহেতু আমাদের শ্রীলঙ্কা সিরিজটা খুব খারাপ গেছে। এখন যদি অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে পারে।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস