সময়ে কত কিছুই না পাল্টে যায়! এক সময় ঢাকা লিগ ছিল দেশের ক্রিকেটের প্রাণ। দর্শক, অনুরাগী, ভক্ত ও সমর্থকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুই ছিল প্রিমিয়ার লিগ। আর ফুটবল ও হকির মত সেই প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ মানেই ছিল অন্যরকম আকর্ষণ। উত্তেজনার পারদে ঠাসা এক ধুন্ধুমার লড়াই। যার পরতে পরতে ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
Advertisement
দেশের দুই জনপ্রিয় ও প্রধান ক্রীড়া শক্তির লড়াই দেখতে ছুটে যেত হাজারো অনুরাগী। আবাহনী ও মোহামেডান ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ভড়ে যেত দর্শকে। সময়ের ফেরে তা আজ অনেকটাই ফিঁকে। এখন আর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দর্শক ও ক্রিকেট অনুরাগীদের সেভাবে টানে না। গ্যালারি প্রায় খালিই থাকে।
দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখতে দেখতে দর্শকরা এখন আর ক্লাব ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ এখন আগের মত উত্তেজনা ছড়ায় না।
গ্যালারিও দর্শকে পরিপূর্ণ থাকে না। আর সবচেয়ে বড় কথা, গত দুই বছরে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হয়েছে রাজধানীর বাইরে ফতুল্লা না হয় বিকেএসপিতে। তবে আজ (সোমবার) আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হবে শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তাই ঢাকার ক্রিকেট অনুরাগিরা এবার আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। রোববার রাতে মিরপুরে বৃষ্টি হলেও নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হচ্ছে। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোহামেডান অধিনায়ক শামসুর রহমান শুভ।
Advertisement
এদিকে লিগে দুই দলের শুধু আকর্ষণই কমেনি। দুই দলের অবস্থানের হেরফেরও হয়েছে। আগে বেশির ভাগ সময় মূল লড়াই আবাহনী আর মোহামেডানের মধ্যেই স্থির থাকতো। এখন তা নেই। আবাহনী কাগজে কলমে ভালো দল গড়লেও মোহামেডান সে অর্থে আর কাগজে কলমে শক্তিশালি দল নয়।
সে কারণেই দু'দলের ম্যাচ এখন শুধুই ঐতিহ্যের লড়াই। দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর আজকের লড়াইও তেমন। পাঁচ ম্যাচের সব কটা জিতে লিগ টেবিলে সবার ওপরে আবাহনী। অন্যদিকে মোহামেডান প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর ঘুরে টানা তিন ম্যাচ জিতে সুপার সিক্সে থাকার প্রাণপণ চেষ্টায়।
সোমবারের লড়াইটি আবাহনীর কাছে শীর্ষস্থান ধরে রাখার ম্যাচ। জিতলে এক নম্বর স্থান হবে আরও মজবুত। আর পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা মোহামেডানের জন্য আজকের ম্যাচ অবস্থান সমৃদ্ধ করার, তথা লিগ টেবিলে ওপরের দিকে উঠে আসার লড়াই।
এক সময় জয় পরাজয়ের পাল্লা প্রায় সমান সমান থাকলেও এখন আবাহনীর পাল্লা অনেক ভারী। গত পাঁচ ছয় বছরে দুই দলের লড়াইয়ে আবাহনীর সাফল্য প্রায় একচেটিয়া। গতবার দুই লিগেই সাদা কালোদের পর্যুদস্ত করেছে আকাশী হলুদ শিবির।
Advertisement
প্রথম পর্বে আবাহনীর কাছে দাঁড়াতেই পারেনি মোহামেডান। তবে বিকেএসপিতে হওয়া সুপার লিগের লড়াই হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে। লিটন দাসের শতরানে আবাহনীর গড়া ৩৭৪ রানের হিমালয় সমান স্কোরের জবাবে রকিবুলের ক্যারিয়ার সেরা ১৯০ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংসে পাল্টা জবাব দিয়ে জয়ের খুব কাছে চলে গিয়ে গিয়েছিল মোহামেডান।
দেখা যাক এবার কি হয়? মাশরাফি, নাসির, বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক, সাইফ, মেহেদি হাসান মিরাজ আর সানজামুল ও সাকলাইন সজীবদের নিয়ে গড়া আবাহনী নিঃসন্দেহে ফেবারিট। তবে রনি তালুকদার, শামসুর রহমান শুভ, রকিবুল, তাইজুল ও শুভাশীষের সাথে ভারতীয় অলরাউন্ডার বিপুল শর্মা, যুব দলের তরুণ তুর্কি কাজী অনিক, আমিনুল ইসলামদের নিয়ে গড়া মোহামেডানকে একদম হেলাফেলার দল নয়।
এরই মধ্যে শেখ জামাল ও প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে যথাক্রমে ২৮৭ আর ২৫৯ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে সাদা কালোদের। দেখা যাক আজকের মর্যাদা ও ঐতিহ্যের লড়াইয়ে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে মোহামেডান?
এআরবি/এমআর/জেআইএম