একুশে বইমেলা

ভাষা আন্দোলনে নারী-পুরুষ সবারই গৌরবজনক অংশগ্রহণ ছিল

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ভাষা আন্দোলনে নারী-পুরুষ সবারই গৌরবজনক অংশগ্রহণ ছিল। ইতিহাসের পূর্ণতার স্বার্থে সবার অবদান আলোচিত হওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

রোববার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম, ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম এবং একুশের শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্ধারিত প্রবন্ধকার রামেন্দু মজুমদার বিদেশে অবস্থান করায় তার লিখিত ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম প্রবন্ধটি পাঠ করেন ত্রপা মজুমদার। ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিউর রাব্বি এবং একুশের শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম সুমন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শফি আহমেদ এবং মালেকা বেগম।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পঞ্চাশের দশকে যখন আমাদের সমাজে নারীদের বাইরে বেরুনোর ব্যাপারে কড়াকড়ি ছিল ঠিক সেই সময় এই নারীরা রাস্তায় শুধু বেরই হননি, তারা ভাষার জন্য অসম সাহসে সংগ্রামও করেছেন।

Advertisement

ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম শীর্ষক প্রবন্ধে রামেন্দু মজুমদার বলেন, নাদেরা বেগম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আত্মগোপনে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বের ইতিহাসে এক সাহসী ও সংগ্রামী নারী হিসেবে নাদেরা বেগমের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে তার সে সময়ের অসাধারণ ভূমিকার কোন স্বীকৃতি তিনি পাননি। বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ বিস্মৃতি থেকে তাকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে আনবার জন্যে।

ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে রফিউর রাব্বি বলেন, ভাষা আন্দোলনে যেসব নারীদের নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে তাদের মধ্যে মমতাজ বেগম সর্বাগ্রে। এটি শুধু নারায়ণগঞ্জের প্রশ্নে নয়, দেশের সামগ্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা ও অবদান এবং পরে মৃত্যু অবধি পরিচালিত তার আদর্শিক লড়াই- এ এক অনন্য উপাখ্যান। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তার সমস্ত জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে যায়,সংসার ভেঙে যায়। আমাদের সংগ্রামের ইতিহাসে এ এক বিরল উদাহরণ। তার আত্মত্যাগ যুগ-যুগ আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।

একুশের শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম সুমন বলেন, নভেরা আহমেদ এক বর্ণাঢ্য শিল্পজীবনের অধিকারী। তার অমর কীর্তি শিল্পী হামিদুর রহমানের সঙ্গে যুক্তভাবে কৃতমহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নক্শা। বাঙালির সংগ্রাম ও গৌরবের প্রতীক এই শহীদ মিনার অনন্তকাল ধরে জাতির শোক, অশ্রু, আবেগ ও সংকল্পকে ধারণ করে রাখবে।

ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের বাঙালি জাতি যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তেমনি এই শহীদ মিনারের অন্যতম স্থপতি ভাস্কর নভেরা আহমেদকেও স্মরণ করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

Advertisement

আলোচক শফি আহমেদ বলেন, মমতাজ বেগম, নাদেরা বেগম এবং নভেরা আহমেদের মতো বীর নারীরা শুধু ভাষা আন্দোলনে নয়, একই সঙ্গে এই দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনেই শক্তি যুগিয়েছেন।

আলোচক মালেকা বেগম বলেন, এই নারীরা শুধু ভাষা আন্দোলনের সময়পর্বেই নয় বরং বহু আগে থেকে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এরা শুধু ভাষা আন্দোলনে সভা-সমাবেশই করেননি; বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। মাতৃভাষা এবং দেশমাতৃকার জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দিয়ে তারা আমাদের ইতিহাসে শিক্ষাব্রতীর ভূমিকায়ও আসীন হয়ে আছেন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল অধ্যাপক শফিউল আলমের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গেন্ডারিয়া কিশলয় কচিকাঁচার মেলা’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, মো. রেজাউল করিম, মামুন সিদ্দিকী এবং মাহবুবা রহমান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন কাজী ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) এবং ডালিম কুমার বড়ুয়া (কি-বোর্ড)।

এমএইচ/এএসএস/আরআইপি