দেশজুড়ে

ভণ্ড ফকিরের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিল জনতা

ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামে হাসি বেগম নামের এক বিড়ি ফকিরের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা।

Advertisement

এ সময় এলাকাবাসীর রোষানল থেকে বাঁচাতে হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির (৪৮) ও তার সহযোগী মো. মতিয়ার হোসেন মতিকে আটক করেছে পুলিশ।

গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে প্রতারণার শিকার স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ভণ্ড ফকিরের আস্তানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে ফকিরকে মারধর করে।

খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভণ্ড ফকির হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির ও তার সহযোগী মতিয়ার হোসেন মতিকে আটক করা হয়েছে। এ সময় আস্তানা থেকে ছবি, দুটি বাঘের মূর্তি, মরা গরুর হাড়গোড়সহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয়রা জানায়, গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের দিনমজুর জালাল মোল্লার স্ত্রী হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির (৪৮) ২০০৭ সাল স্বপ্নে সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক আশীর্বাদ পেয়েছেন বলে তার কিছু দালালদের দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালান।

স্থানীয় মো. জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রবসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কথিত বিড়ি ফকিরের দালালরা এই বলে প্রচারণা চালান, বিড়ি ফকির স্বপ্নে আধ্যাত্মিক শক্তির বলিয়ান হয়েছেন এবং যেকোনো মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন।

স্থানীয়রা জানায়, আস্তানা গড়ে তোলার পর সেখানে চিকিৎসার নামে চলে প্রতারণা। একইসঙ্গে ওই আস্তানায় গড়ে তোলেন নারীদের নিয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও মাদকের আড্ডা।

ভণ্ড ফকিরের কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশীরা জানান, হাসি বেগম তার অবৈধ প্রতারণা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় উঠতি নেতাদের নিয়মিত মাসোহারা দেন। যে কারণে ওসব নেতাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পেত না।

Advertisement

প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী উজিরপুর উপজেলার বামরাইল গ্রামের গৃহবধূ আলেয়া বেগম (৩২) অভিযোগ করেন, আমার কিছু সমস্যাজনিত রোগের কারণে হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকিরের কাছে যাই। প্রথমে একশ এক টাকা দর্শন ফি নেন। পরবর্তীতে তেল পড়া, পানি পড়া দিয়ে এক হাজার একশ টাকা হাতিয়ে নেন। এতে কোনো সুফল না পেয়ে পুনরায় তার কাছে গেলে গোসল দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে আট হাজার ছয়শ টাকা হাতিয়ে নেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়ননের রাংতা গ্রামের মফসের আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার পেটে ব্যথা হওয়ায় বিড়ি ফকিরের কাছে যাই। একশ এক টাকা দিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করি। এ সময় আমাকে দেখে বলে এখন কোনো চিকিৎসা হবে না। আমার ধ্যানের মুহূর্তে তোরে আসতে হবে। তিনদিন পরে গেলে আমাকে বলে তোকে মানুষ কুফরি দিয়ে ক্ষতি করেছে এবং বান মেরেছে তুই বাঁচবি না। চিকিৎসা দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

একই ধরনের অভিযোগ করেন গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর গ্রামের রাবেয়া বেগম, নলচিড়া গ্রামের মমতাজ বেগম, খাঞ্জাপুর গ্রামের সাফিয়া বেগম।

গৌরনদী পৌর এলাকার মিজান সরদার, ফারুক হোসেন বলেন, আমরা গত শুক্রবার সকালে ভণ্ড ফকিরের আস্তানায় গিয়ে একশ এক টাকা দিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করি। ফকির আমাদের অতীত সম্পর্কে যা বললেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া।

একই দিন গৌরনদী মডেল থানার পুলিশ কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম ভণ্ড ফকিরে আস্তানায় চিকিৎসার জন্য যান এবং প্রতারণা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। তিনি বলেন, ভণ্ড ফকির প্রতারণা করে প্রতিমাসে এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন জানান, ভণ্ড ফকির হাসি বেগম ও তার সহযোগী মতিয়ার হোসেন মতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। লিখিত কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

সাইফ আমীন/এএম/জেআইএম